بِسۡمِ اللهِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِيۡمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
الٓمّٓ
১.) আলিফ লাম-মীম।
اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡحَىُّ الۡقَيُّوۡمُ
২.) আল্লাহ্ এক চিরঞ্জীব ও শাশ্বত সত্ত্বা, যিনি বিশ্ব –জাহানের সমগ্র ব্যবস্থাপনাকে ধারণ করে আছেন, আসলে তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই।
نَزَّلَ عَلَيۡكَ الۡكِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَاَنۡزَلَ التَّوۡرٰٮةَ وَالۡاِنۡجِيۡلَۙ
৩.) তিনি তোমার ওপর এই কিতাব নাযিল করেছেন, যা সত্যের বাণী বহন করে এনেছে এবং আগের কিতাবগুলোর সত্যতা প্রমাণ করছে। এর আগে তিনি মানুষের হিদায়াতের জন্য তাওরাত ও ইঞ্জিল নাযিল করেছিলেন। আর তিনি মানদণ্ড নাযিল করেছেন (যা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করে দেয়)।
مِنۡ قَبۡلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَاَنۡزَلَ الۡفُرۡقَانَ ؕ اِنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا بِاٰيٰتِ اللّٰهِ لَهُمۡ عَذَابٌ شَدِيۡدٌؕ وَاللّٰهُ عَزِيۡزٌ ذُوۡ انتِقَامٍ
৪.) এখন যারা আল্লাহর বিধানসমূহ মেনে নিতে অস্বীকার করবে, তারা অবশ্যই কঠিন শাস্তি পাবে। আল্লাহ অসীম ক্ষমতার অধিকারী এবং তিনি অন্যায়ের শাস্তি দিয়ে থাকেন।
اِنَّ اللّٰهَ لَا يَخۡفٰى عَلَيۡهِ شَىۡءٌ فِىۡ الۡاَرۡضِ وَلَا فِىۡ السَّمَآءِؕ
৫.) পৃথিবী ও আকাশের কোন কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নেই।
هُوَ الَّذِىۡ يُصَوِّرُكُمۡ فِىۡ الۡاَرۡحَامِ كَيۡفَ يَشَآءُؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِيۡزُ الۡحَكِيۡمُ
৬.) তিনি মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি গঠন করেন। এই প্রবল পরাক্রান্ত মহাজ্ঞানের অধিকারী সত্ত্বা ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই।
هُوَ الَّذِىۡۤ اَنۡزَلَ عَلَيۡكَ الۡكِتٰبَ مِنۡهُ اٰيٰتٌ مُّحۡكَمٰتٌ هُنَّ اُمُّ الۡكِتٰبِ وَاُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌۚ فَاَمَّا الَّذِيۡنَ فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡ زَيۡغٌ فَيَتَّبِعُوۡنَ مَا تَشَابَهَ مِنۡهُ ابۡتِغَآءَ الۡفِتۡنَةِ وَابۡتِغَآءَ تَاۡوِيۡلِهٖۚ وَمَا يَعۡلَمُ تَاۡوِيۡلَهٗۤ اِلَّا اللّٰهُۘ وَالرّٰسِخُوۡنَ فِىۡ الۡعِلۡمِ يَقُوۡلُوۡنَ اٰمَنَّا بِهٖۙ كُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ رَبِّنَاۚ وَمَا يَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُوۡا الۡاَلۡبَابِ
৭.) তিনিই তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন। এ কিতাবে দুই ধরনের আয়াত আছেঃ এক হচ্ছে, মুহকামাত, যেগুলো কিতাবের আসল বুনিয়াদ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, মুতাশাবিহাত। যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সবসময় মুতাশাবিহাতের পিছনে লেগে থাকে এবং তার অর্থ করার চেষ্টা করে থাকে। অথচ সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। বিপরীত পক্ষে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারীরা বলেঃ “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে”। আর প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানবান লোকেরাই কোন বিষয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَيۡتَنَا وَهَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡكَ رَحۡمَةًۚ اِنَّكَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ
৮.) তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব! যখন তুমি আমাদের সোজা পথে চালিয়েছো তখন আর আমাদের অন্তরকে বক্রতায় আচ্ছন্ন করে দিয়ো না, তোমার দান ভাণ্ডার থেকে আমাদের জন্য রহমত দান করো কেননা তুমিই আসল দাতা।
رَبَّنَاۤ اِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوۡمٍ لَّا رَيۡبَ فِيۡهِؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا يُخۡلِفُ الۡمِيۡعَادَ
৯.) হে আমাদের রব! অবশ্যি তুমি সমগ্র মানব জাতিকে একদিন একত্রে সমবেত করবে, যে দিনটির আগমনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তুমি কখনো ওয়াদা থেকে বিচ্যুত হও না।”
اِنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِىَ عَنۡهُمۡ اَمۡوَالُهُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ شَيۡـًٔاؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمۡ وَقُوۡدُ النَّارِ
১০.) যারা কুফরী নীতি অবলম্বন করেছে, তাদের না ধন–সম্পদ, না সন্তান–সন্ততি আল্লাহর মোকাবিলায় কোন কাজে লাগবে। তারা দোজখের ইন্ধনে পরিণত হবেই।
كَدَاۡبِ اٰلِ فِرۡعَوۡنَۙ وَالَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡؕ كَذَّبُوۡا بِاٰيٰتِنَاۚ فَاَخَذَهُمُ اللّٰهُ بِذُنُوۡبِهِمۡؕ وَاللّٰهُ شَدِيۡدُ الۡعِقَابِ
১১.) তাদের পরিণাম ঠিক তেমনি হবে যেমন ফেরাউনের সাথী ও তার আগের নাফরমানদের হয়ে গেছেঃ তারা আল্লাহর আয়াতের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, ফলে আল্লাহ তাদের গোনাহের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। আর যথার্থই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদানকারী।
قُل لِّلَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا سَتُغۡلَبُوۡنَ وَتُحۡشَرُوۡنَ اِلٰى جَهَنَّمَؕ وَبِئۡسَ الۡمِهَادُ
১২.) কাজেই হে মুহাম্মাদ! যারা তোমরা দাওয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকার করলো, তাদের বলে দাও, সেই সময় নিকটবর্তী যখন তোমরা পরাজিত হবে এবং তোমাদের জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, আর জাহান্নাম বড়ই খারাপ আবাস।
قَدۡ كَانَ لَكُمۡ اٰيَةٌ فِىۡ فِئَتَيۡنِ الۡتَقَتَاؕ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَاُخۡرٰى كَافِرَةٌ يَّرَوۡنَهُمۡ مِّثۡلَيۡهِمۡ رَاۡىَ الۡعَيۡنِؕ وَاللّٰهُ يُؤَيِّدُ بِنَصۡرِهٖ مَنۡ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِىۡ ذٰلِكَ لَعِبۡرَةً لِّاُولِىۡ الۡاَبۡصَارِ
১৩.) তোমাদের জন্য সেই দু’টি দলের মধ্যে একটি শিক্ষার নিদর্শন ছিল যারা (বদরে) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল এবং অন্য দলটি ছিল কাফের। চোখের দেখায় লোকেরা দেখছিল, কাফেররা মু’মিনদের দ্বিগুণ। কিন্তু ফলাফল (প্রমাণ করলো যে) আল্লাহ তাঁর বিজয় ও সাহায্য দিয়ে যাকে ইচ্ছা সহায়তা দান করেছেন। অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য এর মধ্যে বড়ই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَالۡبَنِيۡنَ وَالۡقَنَاطِيۡرِ الۡمُقَنۡطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالۡفِضَّةِ وَالۡخَيۡلِ الۡمُسَوَّمَةِ وَالۡاَنۡعَامِ وَالۡحَرۡثِؕ ذٰلِكَ مَتَاعُ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَاۚ وَاللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ
১৪.) মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে।
قُلۡ اَؤُنَبِّئُكُمۡ بِخَيۡرٍ مِّنۡ ذٰلِكُمۡؕ لِلَّذِيۡنَ اتَّقَوۡا عِنۡدَ رَبِّهِمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَا وَاَزۡوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَّرِضۡوَانٌ مِّنَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ بَصِيۡرٌۢ بِالۡعِبَادِۚ
১৫.) বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে। পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সঙ্গিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন।
الَّذِيۡنَ يَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِۚ
১৬.) এ লোকেরাই বলেঃ “হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচাও। এরা সবরকারী,
الصّٰبِرِيۡنَ وَالصّٰدِقِيۡنَ وَالۡقٰنِتِيۡنَ وَالۡمُنۡفِقِيۡنَ وَالۡمُسۡتَغۡفِرِيۡنَ بِالۡاَسۡحَارِ
১৭.) সত্যনিষ্ঠ, অনুগত ও দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করে থাকে।”
شَهِدَ اللّٰهُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۙ وَالۡمَلٰٓٮِٕكَةُ وَاُولُوۡا الۡعِلۡمِ قَآٮِٕمَۢا بِالۡقِسۡطِؕ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الۡعَزِيۡزُ الۡحَكِيۡمُ
১৮.) আল্লাহ্ নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। আর ফেরেশতা ও সকল জ্ঞানবান লোকই সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে এ সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সেই প্রবল পরাক্রান্ত ও জ্ঞানবান সত্ত্বা ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই।
اِنَّ الدِّيۡنَ عِنۡدَ اللّٰهِ الۡاِسۡلٰمُ وَمَا اخۡتَلَفَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡيًۢا بَيۡنَهُمۡؕ وَمَنۡ يَّكۡفُرۡ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ فَاِنَّ اللّٰهَ سَرِيۡعُ الۡحِسَابِ
১৯.) ইসলাম আল্লাহর নিকট একমাত্র দ্বীন–জীবন বিধান। যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারা এ দ্বীন থেকে সরে গিয়ে যেসব বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, সেগুলো অবলম্বনের এছাড়া আর কোন কারণই ছিল না যে, প্রকৃত জ্ঞান এসে যাওয়ার পর তারা নিজেদের মধ্যে পরস্পরের ওপর বাড়াবাড়ি করার জন্য এমনটি করেছে। আর যে কেউ আল্লাহর হেদায়াতের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে, তার কাছ থেকে হিসেব নিতে আল্লাহর মোটেই দেরী হয় না।
فَاِنۡ حَآجُّوۡكَ فَقُلۡ اَسۡلَمۡتُ وَجۡهِىَ لِلّٰهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِؕ وَقُل لِّلَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ وَالۡاُمِّيّٖنَ ءَاَسۡلَمۡتُمۡؕ فَاِنۡ اَسۡلَمُوۡا فَقَدِ اهۡتَدَواۚ وَّاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَيۡكَ الۡبَلٰغُؕ وَاللّٰهُ بَصِيۡرٌۢ بِالۡعِبَادِ
২০.) এখন যদি এ লোকেরা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের বলে দাওঃ “আমি ও আমার অনুগতরা আল্লাহর সামনে আনুগত্যের শির নত করেছি।” তারপর আহলি কিতাব ও অ-আহলি কিতাব উভয়কে জিজ্ঞেস করো, “তোমরাও কি তাঁর বন্দেগী কবুল করেছো?” যদি করে থাকে তাহলে ন্যায় ও সত্যের পথ লাভ করেছে আর যদি তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে থাকে, তাহলে তোমার ওপর কেবলমাত্র পয়গাম পৌঁছিয়ে দেবার দায়িত্বই অর্পিত হয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে আল্লাহ নিজেই তার বান্দাদের অবস্থা দেখবেন।
اِنَّ الَّذِيۡنَ يَكۡفُرُوۡنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ وَيَقۡتُلُوۡنَ النَّبِيّٖنَ بِغَيۡرِ حَقٍّۙ وَّيَقۡتُلُوۡنَ الَّذِيۡنَ يَاۡمُرُوۡنَ بِالۡقِسۡطِ مِنَ النَّاسِۙ فَبَشِّرۡهُمۡ بِعَذَابٍ اَلِيۡمٍ
২১.) যারা আল্লাহর বিধান ও হিদায়াত মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁর নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে আর এমন লোকদের প্রাণ সংহার করে, যারা মানুষের মধ্যে ন্যায়, ইনসাফ ও সততার নির্দেশ দেবার জন্য এগিয়ে আসে, তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও।
اُولٰٓٮِٕكَ الَّذِيۡنَ حَبِطَتۡ اَعۡمٰلُهُمۡ فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِيۡنَ
২২.) এরা এমন সব লোক যাদের কর্মকাণ্ড (আমল) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই।
اَلَمۡ تَرَ اِلَى الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا نَصِيۡبًا مِّنَ الۡكِتٰبِ يُدۡعَوۡنَ اِلٰى كِتٰبِ اللّٰهِ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ يَتَوَلّٰى فَرِيۡقٌ مِّنۡهُمۡ وَهُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ
২৩.) তুমি কি দেখনি কিতাবের জ্ঞান থেকে যারা কিছু অংশ পেয়েছে, তাদের কি অবস্থা হয়েছে? তাদের যখন আল্লাহর কিতাবের দিকে সে অনুযায়ী তাদের পরস্পরের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আহবান জানানো হয় তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল পাশ কাটিয়ে যায় এবং এই ফায়সালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡا لَنۡ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَيَّامًا مَّعۡدُوۡدٰتٍ وَّغَرَّهُمۡ فِىۡ دِيۡنِهِمۡ مَّا كَانُوۡا يَفۡتَرُوۡنَ
২৪.) তাদের এ কর্মপদ্ধতির কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “জাহান্নামের আগুন তো আমাদের স্পর্শও করবে না। আর যদি জাহান্নামের শাস্তি আমরা পাই তাহলে তা হবে মাত্র কয়েক দিনের।” তাদের মনগড়া বিশ্বাস নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে বড়ই ভুল ধারণার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।
فَكَيۡفَ اِذَا جَمَعۡنٰهُمۡ لِيَوۡمٍ لَّا رَيۡبَ فِيۡهِ وَوُفِّيَتۡ كُلُّ نَفۡسٍ مَّا كَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُوۡنَ
২৫.) কিন্তু সেদিন কি অবস্থা হবে, যেদিন আমি তাদের একত্র করবো, যেদিনটির আসা একেবারেই অবধারিত? সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং কারো ওপর জুলুম করা হবে না।
قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِكَ الۡمُلۡكِ تُؤۡتِى الۡمُلۡكَ مَنۡ تَشَآءُ وَتَنۡزِعُ الۡمُلۡكَ مِمَّنۡ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الۡخَيۡرُؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
২৬.) বলোঃ হে আল্লাহ! বিশ্ব–জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।
تُوۡلِجُ الَّيۡلَ فِىۡ النَّهَارِ وَتُوۡلِجُ النَّهَارَ فِىۡ الَّيۡلِ وَتُخۡرِجُ الۡحَىَّ مِنَ الۡمَيِّتِ وَتُخۡرِجُ الۡمَيِّتَ مِنَ الۡحَىِّ وَتَرۡزُقُ مَنۡ تَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ
২৭.) তুমি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের মধ্যে। জীবনহীন থেকে জীবন্তের আবির্ভাব ঘটাও এবং জীবন্ত থেকে জীবনহীনের। আর যাকে চাও তাকে তুমি বেহিসেব রিযিক দান করো।
لَا يَتَّخِذِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡكٰفِرِيۡنَ اَوۡلِيَآءَ مِنۡ دُوۡنِ الۡمُؤۡمِنِيۡنَۚ وَمَنۡ يَّفۡعَلۡ ذٰلِكَ فَلَيۡسَ مِنَ اللّٰهِ فِىۡ شَىۡءٍ اِلَّاۤ اَنۡ تَتَّقُوۡا مِنۡهُمۡ تُقٰٮةًؕ وَيُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفۡسَهٗ ؕوَاِلَى اللّٰهِ الۡمَصِيۡرُ
২৮.) মু’মিনরা যেন ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক, বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে গ্রহণ না করে। যে এমনটি করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। তবে হ্যাঁ, তাদের জুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্য তোমরা যদি বাহ্যত এ নীতি অবলম্বন করো তাহলে তা মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্ত্বার ভয় দেখাচ্ছেন আর তোমাদের তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
قُلۡ اِنۡ تُخۡفُوۡا مَا فِىۡ صُدُوۡرِكُمۡ اَوۡ تُبۡدُوۡهُ يَعۡلَمۡهُ اللّٰهُؕ وَيَعۡلَمُ مَا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَمَا فِىۡ الۡاَرۡضِؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
২৯.) হে নবী! লোকদের জানিয়ে দাও, তোমাদের মনের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে তোমরা লুকিয়ে রাখো বা প্রকাশ করো, আল্লাহ তা জানেন। পৃথিবী ও আকাশের কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে অবস্থান করছে না এবং তাঁর কর্তৃত্ব সবকিছুর ওপর পরিব্যাপ্ত।
يَوۡمَ تَجِدُ كُلُّ نَفۡسٍ مَّا عَمِلَتۡ مِنۡ خَيۡرٍ مُّحۡضَرًا وَّمَا عَمِلَتۡ مِنۡ سُوۡٓءٍ تَوَدُّ لَوۡ اَنَّ بَيۡنَهَا وَبَيۡنَهٗۤ اَمَدًاۢ بَعِيۡدًاؕ وَيُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفۡسَهٗؕ وَاللّٰهُ رَءُوۡفٌۢ بِالۡعِبَادِ
৩০.) সেদিন আসবে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের ফল সামনে উপস্থিত পাবে, তা ভালো কাজই হোক আর মন্দ কাজ। সেদিন মানুষ কামনা করবে, হায়! যদি এখনো এই দিন এর থেকে অনেক দূরে অবস্থান করতো! আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর নিজের সত্ত্বার ভয় দেখাচ্ছেন। আর তিনি নিজের বান্দাদের গভীর শুভাকাঙ্খী।
قُلۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِىۡ يُحۡبِبۡكُمُ اللّٰهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوۡبَكُمۡؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
৩১.) হে নবী! লোকদের বলে দাওঃ “যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” তাদেরকে বলোঃ আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করো।
قُلۡ اَطِيۡعُوۡا اللّٰهَ وَالرَّسُوۡلَۚ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ الۡكٰفِرِيۡنَ
৩২.) তারপর যদি তারা তোমাদের এ দাওয়াত গ্রহণ না করে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ এমন লোকদের ভালোবাসবেন না, যারা তাঁর ও তাঁর রসূলদের আনুগত্য করতে অস্বীকার করে।
اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰىۤ اٰدَمَ وَنُوۡحًا وَّاٰلَ اِبۡرٰهِيۡمَ وَاٰلَ عِمۡرٰنَ عَلَى الۡعٰلَمِيۡنَ
৩৩.) আল্লাহ্ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদেরকে সমগ্র বিশ্ববাসীর ওপর প্রাধান্য দিয়ে (তাঁর রিসালাতের জন্য) মনোনীত করেছিলেন।
ذُرِّيَّةًۢ بَعۡضُهَا مِنۡۢ بَعۡضٍؕ وَاللّٰهُ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌ
৩৪.) এরা সবাই একই ধারায় অন্তর্গত ছিল, একজনের উদ্ভব ঘটেছিল অন্যজনের বংশ থেকে। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও জানেন।
اِذۡ قَالَتِ امۡرَاَتُ عِمۡرٰنَ رَبِّ اِنِّىۡ نَذَرۡتُ لَكَ مَا فِىۡ بَطۡنِىۡ مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلۡ مِنِّىۡٓۚ اِنَّكَ اَنۡتَ السَّمِيۡعُ الۡعَلِيۡمُ
৩৫.) (তিনি তখন শুনছিলেন) যখন ইমরানের মহিলা বলছিলঃ “হে আমার রব! আমার পেটে এই যে সন্তানটি আছে এটি আমি তোমার জন্য নজরানা দিলাম, সে তোমার জন্য উৎসর্গীত হবে। আমার এই নজরানা কবুল করে নাও। তুমি সবকিছু শোনো ও জানো।”
فَلَمَّا وَضَعَتۡهَا قَالَتۡ رَبِّ اِنِّىۡ وَضَعۡتُهَاۤ اُنۡثٰىؕ وَاللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا وَضَعَتۡؕ وَلَيۡسَ الذَّكَرُ كَالۡاُنۡثٰىۚ وَاِنِّىۡ سَمَّيۡتُهَا مَرۡيَمَ وَاِنِّىۡۤ اُعِيۡذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيۡطٰنِ الرَّجِيۡمِ
৩৬.) তারপর যখন সেই শিশু কন্যাটি তার ওখানে জন্ম নিল, সে বললোঃ “হে আমার প্রভু! আমার এখানে তো মেয়ে জন্ম নিয়েছে। অথচ সে যা প্রসব করেছিল তা আল্লাহর জানাই ছিল।-আর পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মতো হয় না। যা হোক আমি তার নাম রেখে দিলাম মারয়াম। আর আমি তাকে ও তার ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকে অভিশপ্ত শয়তানের ফিতনা থেকে রক্ষার জন্য তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করছি।”
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُوۡلٍ حَسَنٍ وَّاَنۡۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَّكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاؕ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا الۡمِحۡرَابَۙ وَجَدَ عِنۡدَهَا رِزۡقًاۚ قَالَ يٰمَرۡيَمُ اَنّٰى لَكِ هٰذَاؕ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِؕ اِنَّ اللّٰهَ يَرۡزُقُ مَنۡ يَّشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ
৩৭.) অবশেষে তার রব কন্যা সন্তানটিকে সন্তুষ্টি সহকারে কবুল করে নিলেন, তাকে খুব ভালো মেয়ে হিসেবে গড়ে তুললেন এবং যাকারিয়াকে বানিয়ে দিলেন তার অভিভাবক। যাকারিয়া যখনই তার কাছে মিহরাবে যেতো, তার কাছে কিছু না কিছু পানাহার সামগ্রী পেতো। জিজ্ঞেস করতোঃ “মারয়াম! এগুলো তোমরা কাছে কোথা থেকে এলো?” সে জবাব দিতোঃ আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। আল্লাহ যাকে চান, বেহিসেব দান করেন।
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهٗۚ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِىۡ مِنۡ لَّدُنۡكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةًۚ اِنَّكَ سَمِيۡعُ الدُّعَآءِ
৩৮.) এ অবস্থা দেখে যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করলোঃ “হে আমার রব! তোমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাকে সৎ সন্তান দান করো। তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” যখন তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন
فَنَادَتۡهُ الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ وَهُوَ قَآٮِٕمٌ يُّصَلِّىۡ فِىۡ الۡمِحۡرَابِۙ اَنَّ اللّٰهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيٰى مُصَدِّقًۢا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ وَسَيِّدًا وَّحَصُوۡرًا وَّنَبِيًّا مِّنَ الصّٰلِحِيۡنَ
৩৯.) তখন এর জবাবে তাকে ফেরেশতাগণ বললোঃ “আল্লাহ্ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দান করেছেন। সে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ফরমানের সত্যতা প্রমাণকারী হিসেবে আসবে। তার মধ্যে নেতৃত্ব ও সততার গুণাবলী থাকবে। সে পরিপূর্ণ সংযমী হবে, নবুওয়াতের অধিকারী হবে এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে গণ্য হবে।”
قَالَ رَبِّ اَنّٰى يَكُوۡنُ لِىۡ غُلٰمٌ وَّقَدۡ بَلَغَنِىَ الۡكِبَرُ وَامۡرَاَتِىۡ عَاقِرٌؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللّٰهُ يَفۡعَلُ مَا يَشَآءُ
৪০.) যাকারিয়া বললোঃ “হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে। আল্লাহ্ যা চান তাই করেন।”
قَالَ رَبِّ اجۡعَل لِّىۡۤ اٰيَةًؕ قَالَ اٰيَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَةَ اَيَّامٍ اِلَّا رَمۡزًاؕ وَاذۡكُر رَّبَّكَ كَثِيۡرًا وَّسَبِّحۡ بِالۡعَشِىِّ وَالۡاِبۡكَارِ
৪১.) আরজ করলোঃ “হে প্রভু! তাহলে আমার জন্য কোন নিশানী ঠিক করে দাও।” জবাব দিলেনঃ “নিশানী হচ্ছে এই যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোন কথা বলবে না। এই সময়ে নিজের রবকে খুব বেশী করে ডাকো এবং সকাল সাঁঝে তাঁর ‘তাস্বীহ’ করতে থাকো।”
وَاِذۡ قَالَتِ الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ يٰمَرۡيَمُ اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰٮكِ وَطَهَّرَكِ وَاصۡطَفٰٮكِ عَلٰى نِسَآءِ الۡعٰلَمِيۡنَ
৪২.) তারপর এক সময় এলো, ফেরেশতারা মারয়ামের কাছে এসে বললোঃ “হে মারয়াম! আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন, তোমাকে পবিত্রতা দান করেছেন এবং সারা বিশ্বের নারী সমাজের মধ্যে তোমাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের সেবার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন।
يٰمَرۡيَمُ اقۡنُتِىۡ لِرَبِّكِ وَاسۡجُدِىۡ وَارۡكَعِىۡ مَعَ الرّٰكِعِيۡنَ
৪৩.) হে মারয়াম! তোমার রবের ফরমানের অনুগত হয়ে থাকো। তাঁর সামনে সিজদাবনত হও এবং যেসব বান্দা তাঁর সামনে অবনত হয় তুমিও তাদের সাথে অবনত হও।”
ذٰلِكَ مِنۡ اَنۡۢبَآءِ الۡغَيۡبِ نُوۡحِيۡهِ اِلَيۡكَؕ وَمَا كُنۡتَ لَدَيۡهِمۡ اِذۡ يُلۡقُوۡنَ اَقۡلاَمَهُمۡ اَيُّهُمۡ يَكۡفُلُ مَرۡيَمَ وَمَا كُنۡتَ لَدَيۡهِمۡ اِذۡ يَخۡتَصِمُوۡنَ
৪৪.) হে মুহাম্মাদ! এসব অদৃশ্য বিষয়ের খবর, অহীর মাধ্যমে আমি এগুলো তোমাকে জানাচ্ছি। অথচ তুমি তখন সেখানে ছিলে না, যখন হাইকেলের সেবায়েতরা মারয়ামের তত্ত্বাবধায়ক কে হবে একথার ফায়সালা করার জন্য নিজেদের কলম নিক্ষেপ করছিল। আর তুমি তখনো সেখানে ছিলে না যখন তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল।
اِذۡ قَالَتِ الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ يٰمَرۡيَمُ اِنَّ اللّٰهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنۡهُ اسۡمُهُ الۡمَسِيۡحُ عِيۡسَى ابۡنُ مَرۡيَمَ وَجِيۡهًا فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِ وَمِنَ الۡمُقَرَّبِيۡنَ
৪৫.) যখন ফেরেশতারা বললঃ “হে মারয়াম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর একটি ফরমানের সুসংবাদ দান করেছেন। তার নাম হবে মসীহ ঈসা ইবনে মারয়াম। সে দুনিয়ায় ও আখেরাতে সম্মানিত হবে। আল্লাহর নৈকট্যলাভকারী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِىۡ الۡمَهۡدِ وَكَهۡلاً وَّمِنَ الصّٰلِحِيۡنَ
৪৬.) দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সেও মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সে হবে সৎব্যক্তিদের অন্যতম।”
قَالَتۡ رَبِّ اَنّٰى يَكُوۡنُ لِىۡ وَلَدٌ وَّلَمۡ يَمۡسَسۡنِىۡ بَشَرٌؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللّٰهُ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُؕ اِذَا قَضٰٓى اَمۡرًا فَاِنَّمَا يَقُوۡلُ لَهٗ كُنۡ فَيَكُوۡنُ
৪৭.) একথা শুনে মারয়াম বললোঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শও করেনি।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে। আল্লাহ্ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কেবল এতটুকুই বলেন, হয়ে যাও, তাহলেই তা হয়ে যায়।”
وَيُعَلِّمُهُ الۡكِتٰبَ وَالۡحِكۡمَةَ وَالتَّوۡرٰٮةَ وَالۡاِنۡجِيۡلَ
৪৮.) (ফেরেশতারা আবার তাদের আগের কথার জের টেনে বললোঃ) “আর আল্লাহ তাকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন, তাওরাত ও ইনজীলের জ্ঞান দান করবেন
وَرَسُوۡلاً اِلٰى بَنِىۡۤ اِسۡرٰٓءِيۡلَ ۙ اَنِّىۡ قَدۡ جِئۡتُكُمۡ بِاٰيَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡۙ اَنِّىۡۤ اَخۡلُقُ لَكُمۡ مِّنَ الطِّيۡنِ كَهَيۡـَٔةِ الطَّيۡرِ فَاَنۡفُخُ فِيۡهِ فَيَكُوۡنُ طَيۡرًۢا بِاِذۡنِ اللّٰهِۚ وَاُبۡرِئُ الۡاَكۡمَهَ وَالۡاَبۡرَصَ وَاُحۡىِ الۡمَوۡتٰى بِاِذۡنِ اللّٰهِؕ وَاُنَبِّئُكُمۡ بِمَا تَاۡكُلُوۡنَ وَمَا تَدَّخِرُوۡنَۙ فِىۡ بُيُوۡتِكُمۡؕ اِنَّ فِىۡ ذٰلِكَ لَاٰيَةً لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ
৪৯.) এবং নিজের রসূল বানিয়ে ইসরাঈলদের কাছে পাঠাবেন।”
(আর বনী ইসরাঈলদের কাছে রসূল হিসেবে এসে সে বললোঃ) “আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিশানী নিয়ে এসেছি। আমি তোমাদের সামনে মাটি থেকে পাখির আকৃতি বিশিষ্ট একটি মূর্তি তৈরী করছি এবং তাতে ফুৎকার দিচ্ছি, আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আল্লাহর হুকুমে আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করি এবং মৃতকে জীবিত করি। আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি, তোমরা নিজেদের গৃহে কি খাও ও কি মজুদ করো। এর মধ্যে তোমাদের জন্য যথেষ্ট নিশানী রয়েছে, যদি তোমরা ঈমানদার হও।
وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيۡنَ يَدَىَّ مِنَ التَّوۡرٰٮةِ وَلِاُحِلَّ لَكُمۡ بَعۡضَ الَّذِىۡ حُرِّمَ عَلَيۡكُمۡؕوَجِئۡتُكُمۡ بِاٰيَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ فَاتَّقُوۡا اللّٰهَ وَاَطِيۡعُوۡنِ
৫০.) আমি সেই শিক্ষা ও হিদায়াতের সত্যতা ঘোষণা করার জন্য এসেছি, যা বর্তমানে আমার যুগে তাওরাতে আছে। আর তোমাদের জন্য যেসব জিনিস হারাম ছিল তার কতকগুলো হালাল করার জন্য আমি এসেছি। দেখো, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে আমি নিশানী নিয়ে এসেছি। কাজেই আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।
اِنَّ اللّٰهَ رَبِّىۡ وَرَبُّكُمۡ فَاعۡبُدُوۡهُؕ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسۡتَقِيۡمٌ
৫১.) আল্লাহ্ আমার রব এবং তোমাদেরও রব। কাজেই তোমরা তাঁর বন্দেগী করো। এটিই সোজাপথ।”
فَلَمَّاۤ اَحَسَّ عِيۡسٰى مِنۡهُمُ الۡكُفۡرَ قَالَ مَنۡ اَنۡصَارِىۡۤ اِلَى اللّٰهِؕ قَالَ الۡحَوَارِيُّوۡنَ نَحۡنُ اَنۡصَارُ اللّٰهِۚ اٰمَنَّا بِاللّٰهِۚ وَاشۡهَدۡ بِاَنَّا مُسۡلِمُوۡنَ
৫২.) যখন ঈসা অনুভব করলো, ইসরাঈল কুফরী ও অস্বীকার করতে উদ্যোগী হয়েছে, সে বললোঃ “কে হবে আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ বললোঃ আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম (আল্লাহ্র সামনে আনুগত্যের শির নতকারী)।
رَبَّنَاۤ اٰمَنَّا بِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ وَاتَّبَعۡنَا الرَّسُوۡلَ فَاكۡتُبۡنَا مَعَ الشّٰهِدِيۡنَ
৫৩.) হে আমাদের মালিক! তুমি যে ফরমান নাযিল করেছ, আমরা তা মেনে নিয়েছি এবং রসূলের আনুগত্য কবুল করে নিয়েছি। সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে আমাদের নাম লিখে নিয়ো।”
وَمَكَرُوۡا وَمَكَرَ اللّٰهُؕ وَاللّٰهُ خَيۡرُ الۡمٰكِرِيۡنَ
৫৪.) তারপর বনী ইসরাঈল (ঈসার বিরুদ্ধে) গোপন চক্রান্ত করতে লাগলো। জবাবে আল্লাহও তাঁর গোপন কৌশল খাটালেন। আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কুশলী।
اِذۡ قَالَ اللّٰهُ يٰعِيۡسٰىۤ اِنِّىۡ مُتَوَفِّيۡكَ وَرَافِعُكَ اِلَىَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا وَجَاعِلُ الَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡكَ فَوۡقَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡۤا اِلٰى يَوۡمِ الۡقِيٰمَةِۚ ثُمَّ اِلَىَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَاَحۡكُمُ بَيۡنَكُمۡ فِيۡمَا كُنۡتُمۡ فِيۡهِ تَخۡتَلِفُوۡنَ
৫৫.) (এটি আল্লাহরই একটি গোপন কৌশল ছিল) যখন তিনি বললেনঃ “হে ঈসা! এখন আমি তোমাকে ফিরিয়ে নেবো এবং তোমাকে আমার নিজের দিকে উঠিয়ে নেবো। আর যারা তোমাকে অস্বীকার করেছে তাদের থেকে (অর্থাৎ তাদের সঙ্গ এবং তাদের পূতিগন্ধময় পরিবেশে তাদের সঙ্গে থাকা থেকে) তোমাকে পবিত্র করে দেবো এবং তোমাকে যারা অস্বীকার করেছে তাদের ওপর তোমার অনুসারীদের কিয়ামত পর্যন্ত প্রাধান্য দান করবো। তারপর তোমাদের সবাইকে অবশেষে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। সে সময় আমি তোমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর মীমাংসা করে দেবো।
فَاَمَّا الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا فَاُعَذِّبُهُمۡ عَذَابًا شَدِيۡدًا فِىۡ الدُّنۡيَا وَالۡاٰخِرَةِ وَمَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِيۡنَ
৫৬.) যারা কুফরী ও অস্বীকার করার নীতি অবলম্বন করেছে তাদেরকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে উভয় স্থানে কঠোর শাস্তি দেবো এবং তারা কোন সাহায্যকারী পাবে না।
وَاَمَّا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوۡا الصّٰلِحٰتِ فَيُوَفِّيۡهِمۡ اُجُوۡرَهُمۡؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ الظّٰلِمِيۡنَ
৫৭.) আর যারা ঈমান ও সৎকাজ করার নীতি অবলম্বন করেছে, তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। ভালো করেই জেনে রাখো আল্লাহ জালেমদের কখনোই ভালোবাসেন না।”
ذٰلِكَ نَتۡلُوۡهُ عَلَيۡكَ مِنَ الۡاٰيٰتِ وَالذِّكۡرِ الۡحَكِيۡمِ
৫৮.) এই আয়াত ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আমি তোমাকে শুনাচ্ছি।
اِنَّ مَثَلَ عِيۡسٰى عِنۡدَ اللّٰهِ كَمَثَلِ اٰدَمَؕ خَلَقَهٗ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهٗ كُنۡ فَيَكُوۡنُ
৫৯.) আল্লাহ্র কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো। কেননা আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং হুকুম দেন, হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়।
اَلۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّكَ فَلَا تَكُنۡ مِّنَ الۡمُمۡتَرِيۡنَ
৬০.) এ প্রকৃত সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কাজেই তুমি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
فَمَنۡ حَآجَّكَ فِيۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَكَ مِنَ الۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡا نَدۡعُ اَبۡنَآءَنَا وَاَبۡنَآءَكُمۡ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمۡ وَاَنۡفُسَنَا وَاَنۡفُسَكُمۡ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَل لَّعۡنَتَ اللّٰهِ عَلَى الۡكٰذِبِيۡنَ
৬১.) এই জ্ঞান এসে যাওয়ার পর এখন যে কেউ এ ব্যাপারে তোমার সাথে ঝগড়া করে, হে মুহাম্মাদ! তাকে বলে দাওঃ “এসো আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রগণকে এবং তোমাদের পুত্রগণকে। আর আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে আর আমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের নিজেদেরকে; তারপর আল্লাহর কাছে এই মর্মে দোয়া করি যে, যে মিথ্যাবাদী হবে তার ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।”
اِنَّ هٰذَا لَهُوَ الۡقَصَصُ الۡحَقُّۚ وَمَا مِنۡ اِلٰهٍ اِلَّا اللّٰهُؕ وَاِنَّ اللّٰهَ لَهُوَ الۡعَزِيۡزُ الۡحَكِيۡمُ
৬২.) নিঃসন্দেহে এটা নির্ভুল সত্য বৃত্তান্ত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহর সত্ত্বা প্রবল পরাক্রান্ত এবং তার জ্ঞান ও কর্মকৌশল সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থায় সক্রিয়।
فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ عَلِيۡمٌۢ بِالۡمُفۡسِدِيۡنَ
৬৩.) কাজেই এরা যদি (এই শর্তে মোকাবিলায় আসার ব্যাপারে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে (তারা যে ফাসাদকারী একথা পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং) আল্লাহ অবশ্যই ফাসাদকারীদের অবস্থা ভালো করেই জানেন।
قُلۡ يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ تَعَالَوۡا اِلٰى كَلِمَةٍ سَوَآءٍۭ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ اَلَّا نَعۡبُدَ اِلَّا اللّٰهَ وَلَا نُشۡرِكَ بِهٖ شَيۡـًٔا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعۡضُنَا بَعۡضًا اَرۡبَابًا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِؕ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُوۡلُوۡا اشۡهَدُوۡا بِاَنَّا مُسۡلِمُوۡنَ
৬৪.) বলঃ হে আহলি কিতাব! এসো এমন একটি কথার দিকে, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই ধরনের। তা হচ্ছেঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া কারোর বন্দেগী ও দাসত্ব করবো না। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবো না। আর আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও নিজের রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। যদি তারা এ দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত না হয়, তাহলে পরিষ্কার বলে দাওঃ “তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা অবশ্যই মুসলিম (একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যকারী)।”
يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لِمَ تُحَآجُّوۡنَ فِىۡۤ اِبۡرٰهِيۡمَ وَمَاۤ اُنۡزِلَتِ التَّوۡرٰٮةُ وَالۡاِنۡجِيۡلُ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِهٖۤؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ
৬৫.) হে আহলি কিতাব! তোমরা ইব্রাহীমের ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করছো কেন? তাওরাত ও ইঞ্জিল তো ইব্রাহীমের পরে নাযিল হয়েছে। তাহলে তোমরা কি এতটুকু কথাও বুঝো না?
هٰۤاَنۡتُمۡ هٰٓؤُلَآءِ حٰجَجۡتُمۡ فِيۡمَا لَكُمۡ بِهٖ عِلۡمٌ فَلِمَ تُحَآجُّوۡنَ فِيۡمَا لَيۡسَ لَكُمۡ بِهٖ عِلۡمٌؕ وَاللّٰهُ يَعۡلَمُ وَاَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ
৬৬.) -তোমরা যেসব বিষয়ের জ্ঞান রাখো সেগুলোর ব্যাপারে বেশ বিতর্ক করলে, এখন আবার সেগুলোর ব্যাপারে বিতর্ক করতে চললে কেন যেগুলোর কোন জ্ঞান তোমাদের নেই?-আল্লাহ্ জানেন কিন্তু তোমরা জানো না।
مَا كَانَ اِبۡرٰهِيۡمُ يَهُوۡدِيًّا وَّلَا نَصۡرَانِيًّا وَّلٰكِنۡ كَانَ حَنِيۡفًا مُّسۡلِمًا وَّمَا كَانَ مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ
৬৭.) ইব্রাহীম ইহুদী ছিল না, খৃস্টানও ছিল না বরং সে তো ছিল একজন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং সে কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ইব্রাহীমের যারা অনুসরণ করেছে তারাই তাঁর সাথে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক রাখার অধিকারী।
اِنَّ اَوۡلَى النَّاسِ بِاِبۡرٰهِيۡمَ لَلَّذِيۡنَ اتَّبَعُوۡهُ وَهٰذَا النَّبِىُّ وَالَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡاؕ وَاللّٰهُ وَلِىُّ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ
৬৮.) আর এখন এই নবী এবং এর ওপর যারা ঈমান এনেছে তারাই এই সম্পর্ক রাখার বেশী অধিকারী। আল্লাহ কেবল তাদেরই সমর্থক ও সাহায্যকারী যারা ঈমান এনেছে।
وَدَّتۡ طَّآٮِٕفَةٌ مِّنۡ اَهۡلِ الۡكِتٰبِ لَوۡ يُضِلُّوۡنَكُمؕۡ وَمَا يُضِلُّوۡنَ اِلَّاۤ اَنۡفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُوۡنَ
৬৯.) (হে ঈমানদারগণ!) আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে একটি দল যে কোন রকমে তোমাদের সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। অথচ তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকেই বিপথগামী করছে না। কিন্তু তারা এটা উপলব্ধি করে না।
يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لِمَ تَكۡفُرُوۡنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ وَاَنۡتُمۡ تَشۡهَدُوۡنَ
৭০.) হে আহলি কিতাব! কেন আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করছো, অথচ তোমরা নিজেরাই তা প্রত্যক্ষ করছো?
يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لِمَ تَلۡبِسُوۡنَ الۡحَقَّ بِالۡبَاطِلِ وَتَكۡتُمُوۡنَ الۡحَقَّ وَاَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ
৭১.) হে আহলি কিতাব! কেন সত্যের গায়ে মিথ্যার প্রলেপ লাগিয়ে তাকে সন্দেহযুক্ত করে তুলছো? কেন জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করছো?
وَقَالَتۡ طَّآٮِٕفَةٌ مِّنۡ اَهۡلِ الۡكِتٰبِ اٰمِنُوۡا بِالَّذِىۡۤ اُنۡزِلَ عَلَى الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَجۡهَ النَّهَارِ وَاكۡفُرُوۡۤا اٰخِرَهٗ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُوۡنَۚۖ
৭২.) আহলি কিতাবদের একটি দল বলে, এই নবীকে যারা মেনে নিয়েছে তাদের ওপর যা কিছু নাযিল হয়েছে, তার প্রতি তোমরা সকাল বেলায় ঈমান আনো এবং সাঁঝের বেলায় তা অস্বীকার করো। সম্ভবত এই উপায়ে এই লোকেরা নিজেদের ঈমান থেকে ফিরে যাবে।
وَلَا تُؤۡمِنُوۡۤا اِلَّا لِمَنۡ تَبِعَ دِيۡنَكُمۡؕ قُلۡ اِنَّ الۡهُدٰى هُدَى اللّٰهِۙ اَنۡ يُّؤۡتٰٓى اَحَدٌ مِّثۡلَ مَاۤ اُوۡتِيۡتُمۡ اَوۡ يُحَآجُّوۡكُمۡ عِنۡدَ رَبِّكُمۡؕ قُلۡ اِنَّ الۡفَضۡلَ بِيَدِ اللّٰهِ يُؤۡتِيۡهِ مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ وٰسِعٌ عَلِيۡمٌ
৭৩.) তাছাড়া এই লোকেরা পরস্পর বলাবলি করে, নিজের ধর্মের লোক ছাড়া আর কারো কথা মেনে নিয়ো না। হে নবী! এদের বলে দাও, “আল্লাহ্র হিদায়াতই তো আসল হিদায়াত এবং এটা তো তাঁরই নীতি যে, এক সময় যা তোমাদের দেয়া হয়েছিল, তাই অন্য একজনকে দেয়া হবে অথবা অন্যেরা তোমাদের রবের কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে পেশ করার জন্য শক্তিশালী প্রমাণ পেয়ে যাবে।” হে নবী! তাদের বলে দাও, “অনুগ্রহ ও মর্যাদা আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত, যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন। তিনি ব্যাপক দৃষ্টির অধিকারী
يَخۡتَصُّ بِرَحۡمَتِهٖ مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ ذُوۡ الۡفَضۡلِ الۡعَظِيۡمِ
৭৪.) এবং সবকিছু জানেন। নিজের রহমতের জন্য তিনি যাকে চান নির্ধারিত করে নেন এবং তাঁর অনুগ্রহ বিশাল ব্যাপ্তির অধিকারী।”
وَمِنۡ اَهۡلِ الۡكِتٰبِ مَنۡ اِنۡ تَاۡمَنۡهُ بِقِنۡطَارٍ يُّؤَدِّهٖۤ اِلَيۡكَۚ وَمِنۡهُمۡ مَّنۡ اِنۡ تَاۡمَنۡهُ بِدِيۡنَارٍ لَّا يُؤَدِّهٖۤ اِلَيۡكَ اِلَّا مَا دُمۡتَ عَلَيۡهِ قَآٮِٕمًاؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡا لَيۡسَ عَلَيۡنَا فِىۡ الۡاُمِّيّٖنَ سَبِيۡلٌ وَّيَقُوۡلُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ الۡكَذِبَ وَهُمۡ يَعۡلَمُوۡنَ
৭৫.) আহলি কিতাবদের মধ্যে কেউ এমন আছে, তার ওপর আস্থাস্থাপন করে যদি তাকে সম্পদের স্তূপ দান করো, তাহলেও সে তোমার সম্পদ তোমাকে ফিরিয়ে দেবে। আবার তাদের কারো অবস্থা এমন যে, যদি তুমি তার ওপর একটি মাত্র দীনারের ব্যাপারেও আস্থাস্থাপন করো, তাহলে সে তা তোমাকে ফিরিয়ে দেবে না, তবে যদি তোমরা তার ওপর চড়াও হয়ে যাও। তাদের এই নৈতিক অবস্থার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “নিরক্ষরদের (অ–ইহুদী) ব্যাপারে আমাদের কোন দায়দায়িত্ব নেই।” আর এটা একটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট কথা তারা আল্লাহর প্রতি আরোপ করছে। অথচ তারা জানে, (আল্লাহ্ এমন কোন কথা বলেননি। )
بَلىٰ مَنۡ اَوۡفٰى بِعَهۡدِهٖ وَاتَّقٰى فَاِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَّقِيۡنَ
৭৬.) আচ্ছা, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না কেন? যে ব্যক্তিই তার অঙ্গীকার পূর্ণ করবে এবং অসৎকাজ থেকে দূরে থাকবে, সে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হবে। কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।
اِنَّ الَّذِيۡنَ يَشۡتَرُوۡنَ بِعَهۡدِ اللّٰهِ وَاَيۡمَانِهِمۡ ثَمَنًا قَلِيۡلاً اُولٰٓٮِٕكَ لَا خَلَاقَ لَهُمۡ فِىۡ الۡاٰخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللّٰهُ وَلَا يَنۡظُرُ اِلَيۡهِمۡ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيۡهِمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
৭৭.) আর যারা আল্লাহর সাথে করা অঙ্গীকার ও নিজেদের শপথ সামান্য দামে বিকিয়ে দেয়, তাদের জন্য আখেরাতে কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পাক–পবিত্রও করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
وَاِنَّ مِنۡهُمۡ لَفَرِيۡقًا يَّلۡوٗنَ اَلۡسِنَتَهُمۡ بِالۡكِتٰبِ لِتَحۡسَبُوۡهُ مِنَ الۡكِتٰبِۚ وَمَا هُوَ مِنَ الۡكِتٰبِ وَيَقُوۡلُوۡنَ هُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ وَمَا هُوَ مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِۚ وَيَقُوۡلُوۡنَ عَلَى اللّٰهِ الۡكَذِبَ وَهُمۡ يَعۡلَمُوۡنَ
৭৮.) তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে, তারা কিতাব পড়ার সময় এমনভাবে জিভ ওলট পালট করে যে, তোমরা মনে করতে থাকো, তারা কিতাবেরই ইবারত পড়ছে, অথচ তা কিতাবের ইবারত নয়। তারা বলে, যা কিছু আমরা পড়ছি, তা আল্লাহর কাছ থেকেই পাওয়া অথচ তা আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া নয়, তারা জেনে বুঝে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে।
مَا كَانَ لِبَشَرٍ اَنۡ يُّؤۡتِيَهُ اللّٰهُ الۡكِتٰبَ وَالۡحُكۡمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُوۡلَ لِلنَّاسِ كُوۡنُوۡا عِبَادًا لِّىۡ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلٰكِنۡ كُوۡنُوۡا رَبّٰنِيّٖنَ بِمَا كُنۡتُمۡ تُعَلِّمُوۡنَ الۡكِتٰبَ وَبِمَا كُنۡتُمۡ تَدۡرُسُوۡنَۙ
৭৯.) কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত ও নবুওয়াত দান করবেন আর সে লোকদের বলে বেড়াবে, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে আমার দাস হয়ে যাও, এটা তার জন্য শোভনীয় নয়। সে তো একথাই বলবে, তোমরা খাঁটি রব্বানী হয়ে যাও, যেমন এই কিতাবের দাবী, যা তোমরা পড়ো এবং অন্যদের পড়াও।
وَلَا يَاۡمُرَكُمۡ اَنۡ تَتَّخِذُوۡا الۡمَلٰٓٮِٕكَةَ وَالنَّبِيّٖنَ اَرۡبَابًاؕ اَيَاۡمُرُكُمۡ بِالۡكُفۡرِ بَعۡدَ اِذۡ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
৮০.) তারা তোমাদের কখনো বলবে না, ফেরেশতা বা নবীদেরকে তোমাদের রব হিসেবে গ্রহণ করো। তোমরা যখন মুসলিম তখন তোমাদেরকে কুফরীর হুকুম দেয়া একজন নবীর পক্ষে কি সম্ভব?
وَاِذۡ اَخَذَ اللّٰهُ مِيۡثَاقَ النَّبِيّٖنَ لَمَاۤ اٰتَيۡتُكُمۡ مِّنۡ كِتٰبٍ وَّحِكۡمَةٍ ثُمَّ جَآءَكُمۡ رَسُوۡلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمۡ لَتُؤۡمِنُنَّ بِهٖ وَلَتَنۡصُرُنَّهٗؕ قَالَ ءَاَقۡرَرۡتُمۡ وَاَخَذۡتُمۡ عَلٰى ذٰلِكُمۡ اِصۡرِىۡؕ قَالُوۡۤا اَقۡرَرۡنَاؕ قَالَ فَاشۡهَدُوۡا وَاَنَا مَعَكُمۡ مِّنَ الشّٰهِدِيۡنَ
৮১.) স্মরণ করো, যখন আল্লাহ নবীদের থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, “আজ আমি তোমাদের কিতাব ও হিকমত দান করেছি, কাল যদি অন্য একজন রসূল এই শিক্ষার সত্যতা ঘোষণা করে তোমাদের কাছে আসে, যা আগে থেকেই তোমাদের কাছে আছে, তাহলে তোমাদের তার প্রতি ঈমান আনতে হবে এবং তাকে সাহায্য করতে হবে।” এই বক্তব্য উপস্থাপন করার পর আল্লাহ জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কি এ কথার স্বীকৃতি দিচ্ছো এবং আমার পক্ষ থেকে অঙ্গীকারের গুরুদায়িত্ব বহন করতে প্রস্তুত আছো?” তারা বললো, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করলাম।
فَمَنۡ تَوَلّٰى بَعۡدَ ذٰلِكَ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
৮২.) আল্লাহ্ বললেনঃ “আচ্ছা, তাহলে তোমরা সাক্ষী থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম, এরপর যারাই এ অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তারাই হবে ফাসেক।”
اَفَغَيۡرَ دِيۡنِ اللّٰهِ يَبۡغُوۡنَ وَلَهٗۤ اَسۡلَمَ مَنۡ فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ طَوۡعًا وَّكَرۡهًا وَّاِلَيۡهِ يُرۡجَعُوۡنَ
৮৩.) এখন কি এরা আল্লাহর আনুগত্যের পথ (আল্লাহ্র দ্বীন) ত্যাগ করে অন্য কোন পথের সন্ধান করছে? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম) এবং তাঁরই দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।
قُلۡ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنۡزِلَ عَلَيۡنَا وَمَاۤ اُنۡزِلَ عَلٰٓى اِبۡرٰهِيۡمَ وَاِسۡمٰعِيۡلَ وَاِسۡحٰقَ وَيَعۡقُوۡبَ وَالۡاَسۡبَاطِ وَمَاۤ اُوۡتِىَ مُوۡسَىٰ وَعِيۡسٰى وَالنَّبِيُّوۡنَ مِنۡ رَّبِّهِمۡ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ وَنَحۡنُ لَهٗ مُسۡلِمُوۡنَ
৮৪.) হে নবী! বলোঃ “আমরা আল্লাহকে মানি, আমাদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকে মানি, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও ইয়াকূব সন্তানদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবং মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে যে হিদায়াত দান করা হয় তার উপরও ঈমান রাখি। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম)।”
وَمَنۡ يَّبۡتَغِ غَيۡرَ الۡاِسۡلٰمِ دِيۡنًا فَلَنۡ يُّقۡبَلَ مِنۡهُۚ وَهُوَ فِىۡ الۡاٰخِرَةِ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ
৮৫.) এ আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত।
كَيۡفَ يَهۡدِىۡ اللّٰهُ قَوۡمًا كَفَرُوۡا بَعۡدَ اِيۡمَانِهِمۡ وَشَهِدُوۡۤا اَنَّ الرَّسُوۡلَ حَقٌّ وَّجَآءَهُمُ الۡبَيِّنٰتُؕ وَاللّٰهُ لَا يَهۡدِىۡ الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِيۡنَ
৮৬.) ঈমানের নিয়ামত একবার লাভ করার পর পুনরায় যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করবেন, এটা কেমন করে সম্ভব হতে পারে? অথচ তারা নিজেরা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, রসূল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তার কাছে উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহও এসেছে। আল্লাহ্ জালেমদের হিদায়াত দান করেন না।
اُولٰٓٮِٕكَ جَزَآؤُهُمۡ اَنَّ عَلَيۡهِمۡ لَعۡنَةَ اللّٰهِ وَالۡمَلٰٓٮِٕكَةِ وَالنَّاسِ اَجۡمَعِيۡنَ
৮৭.) তাদের ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমস্ত মানুষের লানত, এটিই হচ্ছে তাদের জুলুমের সঠিক প্রতিদান।
خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاۚ لَا يُخَفَّفُ عَنۡهُمُ الۡعَذَابُ وَلَا هُمۡ يُنۡظَرُوۡنَ
৮৮.) এই অবস্থায় তারা চিরদিন থাকবে। তাদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং তাদের বিরামও দেয়া হবে না।
اِلَّا الَّذِيۡنَ تَابُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ وَاَصۡلَحُوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
৮৯.) তবে যারা তাওবা করে নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করে নেয় তারা এর হাত থেকে রেহাই পাবে। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
اِنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا بَعۡدَ اِيۡمَانِهِمۡ ثُمَّ ازۡدَادُوۡا كُفۡرًا لَّنۡ تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡۚ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الضَّآلُّوۡنَ
৯০.) কিন্তু যারা ঈমান আনার পর আবার কুফরী অবলম্বন করে তারপর নিজেদের কুফরীর মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকে, তাদের তাওবা কবুল হবে না। এ ধরনের লোকেরা তো চরম পথভ্রষ্ট।
اِنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا وَمَاتُوۡا وَهُمۡ كُفَّارٌ فَلَنۡ يُّقۡبَلَ مِنۡ اَحَدِهِمۡ مِّلۡءُ الۡاَرۡضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افۡتَدٰى بِهٖۤ ؕاُولٰٓٮِٕكَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌۙ وَّمَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِيۡنَ
৯১.) নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, যারা কুফরী অবলম্বন করেছে এবং কুফরীর অবস্থায় জীবন দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচাবার জন্য সারা পৃথিবীটাকে স্বর্ণে পরিপূর্ণ করে বিনিময় স্বরূপ পেশ করে তাহলেও তা গ্রহণ করা হবে না। এ ধরনের লোকদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং তারা নিজেদের জন্য কোন সাহায্যকারীও পাবে না।
لَنۡ تَنَالُوۡا الۡبِرَّ حَتّٰى تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ؕ وَمَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَىۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِيۡمٌ
৯২.) তোমরা নেকী অর্জন করতে পারো না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্তুগুলো (আল্লাহ্র পথে) ব্যয় করো। আর তোমরা যা ব্যয় করবে আল্লাহ তা থেকে বেখবর থাকবেন না।
كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلاًّ لِّبَنِىۡۤ اِسۡرآءِيۡلَ اِلَّا مَا حَرَّمَ اِسۡرٰٓءِيۡلُ عَلٰى نَفۡسِهٖ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تُنَزَّلَ التَّوۡرٰٮةُؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِالتَّوۡرٰٮةِ فَاتۡلُوۡهَاۤ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ
৯৩.) এসব খাদ্যবস্তু (শরীয়াতে মুহাম্মাদীতে যেগুলো হালাল) বনী ইসরাঈলদের জন্যও হালাল ছিল। তবে এমন কিছু বস্তু ছিল যেগুলোকে তাওরাত নাযিল হবার পূর্বে বনী ইসরাঈল নিজেই নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছিল। তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা (নিজেদের আপত্তির ব্যাপারে) সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তাওরাত নিয়ে এসো এবং তার কোন বাক্য পেশ করো।
فَمَنِ افۡتَرٰى عَلَى اللّٰهِ الۡكَذِبَ مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ فَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
৯৪.) এরপরও যারা নিজেদের মিথ্যা মনগড়া কথা আল্লাহর প্রতি আরোপ করতে থাকবে তারাই আসলে জালেম।
قُلۡ صَدَقَ اللّٰهُ فَاتَّبِعُوۡا مِلَّةَ اِبۡرٰهِيۡمَ حَنِيۡفًاؕ وَّمَا كَانَ مِنَ الۡمُشۡرِكِيۡنَ
৯৫.) বলে দাও, আল্লাহ যা কিছু বলেছেন, সত্য বলেছেন। কাজেই তোমাদের একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের পদ্ধতির অনুসরণ করা উচিত। আর ইব্রাহীম শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
اِنَّ اَوَّلَ بَيۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِىۡ بِبَكَّةَ مُبٰرَكًا وَّهُدًى لِّلۡعٰلَمِيۡنَۚ
৯৬.) নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ইবাদাত গৃহটি নির্মিত হয় সেটি মক্কায় অবস্থিত। তাকে কল্যাণ ও বরকত দান করা হয়েছিল এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াতের কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল।
اِنَّ اَوَّلَ بَيۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِىۡ بِبَكَّةَ مُبٰرَكًا وَّهُدًى لِّلۡعٰلَمِيۡنَۚ فِيۡهِ اٰيٰتٌۢ بَيِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِيۡمَ ۚ وَمَنۡ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًاؕ وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الۡبَيۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَيۡهِ سَبِيۡلاًؕ وَمَنۡ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِىٌّ عَنِ الۡعٰلَمِيۡنَ
৯৭.) তার মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং ইব্রাহীমের ইবাদাতের স্থান। আর তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, যে তার মধ্যে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। মানুষের মধ্য থেকে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন এই গৃহের হজ্জ্ব সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহর অধিকার। আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।
قُلۡ يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لِمَ تَكۡفُرُوۡنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ شَهِيۡدٌ عَلٰى مَا تَعۡمَلُوۡنَ
৯৮.) বলো, হে আহলি কিতাব! তোমরা কেন আল্লাহর কথা মানতে অস্বীকার করছো? তোমরা যেসব কাজ কারবার করছো, আল্লাহ তা সবই দেখছেন।
قُلۡ يٰۤاَهۡلَ الۡكِتٰبِ لِمَ تَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ مَنۡ اٰمَنَ تَبۡغُوۡنَهَا عِوَجًا وَّاَنۡتُمۡ شُهَدَآءُؕ وَمَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ
৯৯.) বলো, হে আহলি কিতাব! তোমরা এ কেমন কর্মনীতি অবলম্বন করেছো, যে ব্যক্তি আল্লাহর কথা মানে তাকে তোমরা আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখো এবং সে যেন বাঁকা পথে চলে এই কামনা করে থাকো? অথচ তোমরা নিজেরাই তার (সত্য পথাশ্রয়ী হবার) সাক্ষী। তোমরা যা কিছু করছো সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফিল নন।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تُطِيۡعُوۡا فَرِيۡقًا مِّنَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ يَرُدُّوۡكُمۡ بَعۡدَ اِيۡمَانِكُمۡ كٰفِرِيۡنَ
১০০.) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা এই আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে একটি দলের কথা মানো, তাহলে তারা তোমাদের ঈমান থেকে কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
وَكَيۡفَ تَكۡفُرُوۡنَ وَاَنۡتُمۡ تُتۡلٰى عَلَيۡكُمۡ اٰيٰتُ اللّٰهِ وَفِيۡكُمۡ رَسُوۡلُهٗؕ وَمَنۡ يَّعۡتَصِمۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ هُدِىَ اِلٰى صِراطٍ مُّسۡتَقِيۡمٍ
১০১.) তোমাদের জন্যে কুফরীর দিকে ফিরে যাবার এখন আর কোন্ সুযোগটি আছে, যখন তোমাদের শুনানো হচ্ছে আল্লাহর আয়াত এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর রসূল? যে ব্যক্তি আল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরবে, সে অবশ্যই সত্য সঠিক পথ লাভ করবে।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا اتَّقُوۡا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَلَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَاَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ
১০২.) হে ঈমানদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাহকে ভয় করো। মুসলিম থাকা অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়।
وَاعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِيۡعًا وَّلَا تَفَرَّقُوۡا وَاذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَيۡكُمۡ اِذۡ كُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَيۡنَ قُلُوۡبِكُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًاۚ وَّكُنۡتُمۡ عَلٰى شَفَا حُفۡرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَكُمۡ مِّنۡهَاؕ كَذٰلِكَ يُبَيِّنُ اللّٰهُ لَكُمۡ اٰيٰتِهٖ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ
১০৩.) তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে।
وَلۡتَكُنۡ مِّنۡكُمۡ اُمَّةٌ يَّدۡعُوۡنَ اِلَى الۡخَيۡرِ وَيَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
১০৪.) তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যই থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে।
وَلَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِيۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَاخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَيِّنٰتُؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيۡمٌۙ
১০৫.) তোমরা যেন তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে
يَّوۡمَ تَبۡيَضُّ وُجُوۡهٌ وَّتَسۡوَدُّ وُجُوۡهٌؕ فَاَمَّا الَّذِيۡنَ اسۡوَدَّتۡ وُجُوۡهُهُمۡ اَكَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِيۡمَانِكُمۡ فَذُوۡقُوۡا الۡعَذَابَ بِمَا كُنۡتُمۡ تَكۡفُرُوۡنَ
১০৬.) যেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফরী নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।
وَاَمَّا الَّذِيۡنَ ابۡيَضَّتۡ وُجُوۡهُهُمۡ فَفِىۡ رَحۡمَةِ اللّٰهِ هُمۡ فِيۡهَا خٰلِدُوۡنَ
১০৭.) আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং তারা চিরকাল এই অবস্থায় থাকবে।
تِلۡكَ اٰيٰتُ اللّٰهِ نَتۡلُوۡهَا عَلَيۡكَ بِالۡحَقِّؕ وَمَا اللّٰهُ يُرِيۡدُ ظُلۡمًا لِّلۡعٰلَمِيۡنَ
১০৮.) এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।
وَلِلّٰهِ مَا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَمَا فِىۡ الۡاَرۡضِؕ وَاِلَى اللّٰهِ تُرۡجَعُ الۡاُمُوۡرُ
১০৯.) আল্লাহ্ পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসের মালিক এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহর দরবারে পেশ হয়।
كُنۡتُمۡ خَيۡرَ اُمَّةٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَتُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِؕ وَلَوۡ اٰمَنَ اَهۡلُ الۡكِتٰبِ لَكَانَ خَيۡرًا لَّهُمۡؕ مِنۡهُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَاَكۡثَرُهُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
১১০.) এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল। তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য। তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো। এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো। যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়; কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান।
لَنۡ يَّضُرُّوۡكُمۡ اِلَّاۤ اَذًىؕ وَاِنۡ يُّقَاتِلُوۡكُمۡ يُوَلُّوۡكُمُ الۡاَدۡبَارَ ثُمَّ لَا يُنۡصَرُوۡنَ
১১১.) এরা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। বড় জোর কিছু কষ্ট দিতে পারে। এরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করলে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তারপর এমনি অসহায় হয়ে পড়বে যে কোথাও থেকে কোন সাহায্য পাবে না।
ضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ الذِّلَّةُ اَيۡنَ مَا ثُقِفُوۡۤا اِلَّا بِحَبۡلٍ مِّنَ اللّٰهِ وَحَبۡلٍ مِّنَ النَّاسِ وَبَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَضُرِبَتۡ عَلَيۡهِمُ الۡمَسۡكَنَةُؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ كَانُوۡا يَكۡفُرُوۡنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ وَيَقۡتُلُوۡنَ الۡاَنۡۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقٍّؕ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوۡا يَعۡتَدُوۡنَ
১১২.) এদের যেখানেই পাওয়া গেছে সেখানেই এদের ওপর লাঞ্ছনার মার পড়েছে। তবে কোথাও আল্লাহর দায়িত্বে বা মানুষের দায়িত্বে কিছু আশ্রয় মিলে গেলে তা অবশ্যি ভিন্ন কথা, আল্লাহর গযব এদেরকে ঘিরে ফেলেছে। এদের ওপর মুখাপেক্ষিতা ও পরাজয় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এসব কিছুর কারণ হচ্ছে এই যে, এরা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করতে থেকেছে এবং নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। এসব হচ্ছে এদের নাফরমানি ও বাড়াবাড়ির পরিণাম।
لَيۡسُوۡا سَوَآءًؕ مِنۡ اَهۡلِ الۡكِتٰبِ اُمَّةٌ قَآٮِٕمَةٌ يَّتۡلُوۡنَ اٰيٰتِ اللّٰهِ اٰنَآءَ الَّيۡلِ وَهُمۡ يَسۡجُدُوۡنَ
১১৩.) কিন্তু সমস্ত আহলি কিতাব এক ধরনের নয়। এদের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে সত্য পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা রাতে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে এবং তাঁর সামনে সিজদাবনত হয়।
يُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَالۡيَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَيَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡكَرِ وَيُسٰرِعُوۡنَ فِىۡ الۡخَيۡرٰتِؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ مِنَ الصّٰلِحِيۡنَ
১১৪.) আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে। সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং কল্যাণ ও নেকীর কাজে তৎপর থাকে। এরা সৎলোক।
وَمَا يَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَيۡرٍ فَلَنۡ يُّكۡفَرُوۡهُؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌۢ بِالۡمُتَّقِيۡنَ
১১৫.) এরা যে সৎকাজই করবে তার অমর্যাদা করা হবে না। আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুব ভালোভাবেই জানেন।
اِنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِىَ عَنۡهُمۡ اَمۡوَالُهُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُهُمۡ مِّنَ اللّٰهِ شَيۡـًٔاؕ وَاُولٰٓٮِٕكَ اَصۡحٰبُ النَّارِۚ هُمۡ فِيۡهَا خٰلِدُوۡنَ
১১৬.) আর যারা কুফরীনীতি অবলম্বন করেছে, আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের ধন-সম্পদ কোন কাজে লাগবে না এবং তাদের সন্তান–সন্ততিও। তারা তো আগুনের মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখানেই তারা থাকবে চিরকাল।
مَثَلُ مَا يُنۡفِقُوۡنَ فِىۡ هٰذِهِ الۡحَيٰوةِ الدُّنۡيَا كَمَثَلِ رِيۡحٍ فِيۡهَا صِرٌّ اَصَابَتۡ حَرۡثَ قَوۡمٍ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ فَاَهۡلَكَتۡهُؕ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللّٰهُ وَلٰكِنۡ اَنۡفُسَهُمۡ يَظۡلِمُوۡنَ
১১৭.) তারা তাদের এই দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করছে তার উপমা হচ্ছে এমন বাতাস যার মধ্যে আছে তুষার কণা। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে তাদের শস্যক্ষেতের ওপর দিয়ে এই বাতাস প্রবাহিত হয় এবং তাকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তাদের ওপর জুলুম করেননি। বরং প্রকৃতপক্ষে এরা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করেছে।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا بِطَانَةً مِّنۡ دُوۡنِكُمۡ لَا يَاۡلُوۡنَكُمۡ خَبَالاًؕ وَدُّوۡا مَا عَنِتُّمۡۚ قَدۡ بَدَتِ الۡبَغۡضَآءُ مِنۡ اَفۡوٰهِهِمۡۖۚ وَمَا تُخۡفِىۡ صُدُوۡرُهُمۡ اَكۡبَرُؕ قَدۡ بَيَّنَّا لَكُمُ الۡاٰيٰتِ اِنۡ كُنۡتُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ
১১৮.) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের নিজেদের জামায়াতের লোকদের ছাড়া অন্য কাউকে তোমাদের গোপন কথার সাক্ষী করো না। তারা তোমাদের দুঃসময়ের সুযোগ গ্রহণ করতে কুন্ঠিত হয় না। যা তোমাদের ক্ষতি করে তাই তাদের কাছে প্রিয়। তাদের মনের হিংসা ও বিদ্বেষ তাদের মুখ থেকে ঝরে পড়ে এবং যা কিছু তারা নিজেদের বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে তা এর চাইতেও মারাত্মক। আমি তোমাদের পরিষ্কার হিদায়াত দান করেছি। তবে যদি তোমরা বুদ্ধিমান হও (তাহলে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখার সতর্কতা অবলম্বন করবে) ।
هٰۤاَنۡتُمۡ اُولَآءِ تُحِبُّوۡنَهُمۡ وَلَا يُحِبُّوۡنَكُمۡ وَتُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡكِتٰبِ كُلِّهٖۚ وَاِذَا لَقُوۡكُمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّاۖۚ وَاِذَا خَلَوۡا عَضُّوۡا عَلَيۡكُمُ الۡاَنَامِلَ مِنَ الۡغَيۡظِؕ قُلۡ مُوۡتُوۡا بِغَيۡظِكُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِيۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ
১১৯.) তোমরা তাদেরকে ভালোবাসো কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না অথচ তোমরা সমস্ত আসমানী কিতাবকে মানো। তারা তোমাদের সাথে মিলিত হলে বলে, আমরাও(তোমাদের রসূল ও কিতাবকে) মেনে নিয়েছি। কিন্তু তোমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবার পর তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্রোধ ও আক্রোশ এতবেশী বেড়ে যায় যে, তারা নিজেদের আঙুল কামড়াতে থাকে। তাদেরকে বলে দাও, নিজেদের ক্রোধ ও আক্রোশে তোমরা নিজেরাই জ্বলে পুড়ে মরো। আল্লাহ মনের গোপন কথাও জানেন।
اِنۡ تَمۡسَسۡكُمۡ حَسَنَةٌ تَسُؤۡهُمۡ وَاِنۡ تُصِبۡكُمۡ سَيِّئَةٌ يَّفۡرَحُوۡا بِهَاۚ وَاِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَتَتَّقُوۡا لَا يَضُرُّكُمۡ كَيۡدُهُمۡ شَيۡـًٔاؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا يَعۡمَلُوۡنَ مُحِيۡطٌ
১২০.) তোমাদের ভালো হলে তাদের খারাপ লাগে এবং তোমাদের ওপর কোন বিপদ এলে তারা খুশী হয়। তোমরা যদি সবর করো এবং আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের কোন কৌশল কার্যকর হতে পারে না। তারা যা কিছু করছে আল্লাহ তা চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে আছেন।
وَاِذۡ غَدَوۡتَ مِنۡ اَهۡلِكَ تُبَوِّئُ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ مَقٰعِدَ لِلۡقِتَالِؕ وَاللّٰهُ سَمِيۡعٌ عَلِيۡمٌۙ
১২১.) (হে নবী! মুসলমানদের সামনে সে সময়ের কথা বর্ণনা কারো) যখন তুমি অতি প্রত্যুষে নিজের ঘর থেকে বের হয়েছিলে এবং (ওহোদের ময়দানে) মুসলমানদেরকে যুদ্ধের জন্য বিভিন্ন স্থানে নিযুক্ত করেছিলে। আল্লাহ সমস্ত কথা শুনেন এবং তিনি সবকিছু ভালো করে জানেন।
اِذۡ هَمَّتۡ طَّآٮِٕفَتٰنِ مِنۡكُمۡ اَنۡ تَفۡشَلَاۙ وَاللّٰهُ وَلِيُّهُمَاؕ وَعَلَى اللّٰهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
১২২.) স্মরণ করো, যখন তোমাদের দুটি দল কাপুরুষতার প্রদর্শনী করতে উদ্যোগী হয়েছিল, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যের জন্য বর্তমান ছিলেন এবং মু’মিনদের আল্লাহরই ওপর ভরসা করা উচিত।
وَلَقَدۡ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ بِبَدۡرٍ وَّاَنۡتُمۡ اَذِلَّةٌۚ فَاتَّقُوۡا اللّٰهَ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ
১২৩.) এর আগে বদরের যুদ্ধে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছিলেন অথচ তখন তোমরা অনেক দুর্বল ছিলে। কাজেই আল্লাহর না –শোকরী করা থেকে তোমাদের দূরে থাকা উচিত, আশা করা যায় এবার তোমরা শোকর গুজার হবে।
اِذۡ تَقُوۡلُ لِلۡمُؤۡمِنِيۡنَ اَلَنۡ يَّكۡفِيَكُمۡ اَنۡ يُّمِدَّكُمۡ رَبُّكُمۡ بِثَلٰثَةِ اٰلٰفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓٮِٕكَةِ مُنۡزَلِيۡنَؕ
১২৪.) স্মরণ করো যখন তুমি মু’মিনদের বলছিলেঃ “আল্লাহ তাঁর তিন হাজার ফেরেশতা নামিয়ে দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন, এটা কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? ”
بَلٰٓىۙ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَتَتَّقُوۡا وَيَاۡتُوۡكُمۡ مِّنۡ فَوۡرِهِمۡ هٰذَا يُمۡدِدۡكُمۡ رَبُّكُمۡ بِخَمۡسَةِ اٰلٰفٍ مِّنَ الۡمَلٰٓٮِٕكَةِ مُسَوِّمِيۡنَ
১২৫.) অবশ্যি, যদি তোমরা সবর করো এবং আল্লাহকে ভয় করে কাজ করতে থাকো, তাহলে যে মুহূর্তে দুশমন তোমাদের ওপর চড়াও হবে ঠিক তখনি তোমাদের রব (তিন হাজার নয়) পাঁচ হাজার চিহ্নযুক্ত ফেরেশতা দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন।
وَمَا جَعَلَهُ اللّٰهُ اِلَّا بُشۡرٰى لَكُمۡ وَلِتَطۡمَٮِٕنَّ قُلُوۡبُكُمۡ بِهٖؕ وَمَا النَّصۡرُ اِلَّا مِنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ الۡعَزِيۡزِ الۡحَكِيۡمِۙ
১২৬.) একথা আল্লাহ তোমাদের এ জন্য জানিয়ে দিলেন যে, তোমরা এতে খুশী হবে এবং তোমাদের মন আশ্বস্ত হবে। বিজয় ও সাহায্য সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী।
لِيَقۡطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡۤا اَوۡ يَكۡبِتَهُمۡ فَيَنۡقَلِبُوۡا خَآٮِٕبِيۡنَ
১২৭.) (আর এ সাহায্য তিনি তোমাদের এ জন্য দেবেন) যাতে কুফরীর পথ অবলম্বনকারীদের একটি বাহু কেটে দেবার অথবা তাদের এমন লাঞ্জনাপূর্ণ পরাজয় দান করার ফলে তারা নিরাশ হয়ে পশ্চাদপসরণ করবে।
لَيۡسَ لَكَ مِنَ الۡاَمۡرِ شَىۡءٌ اَوۡ يَتُوۡبَ عَلَيۡهِمۡ اَوۡ يُعَذِّبَهُمۡ فَاِنَّهُمۡ ظٰلِمُوۡنَ
১২৮.) (হে নবী!) চূড়ান্ত ফায়সালা করার ক্ষমতায় তোমার কোন অংশ নেই। এটা আল্লাহর ক্ষমতা-ইখতিয়ারভুক্ত, তিনি চাইলে তাদের মাফ করে দেবেন। আবার চাইলে তাদের শাস্তি দেবেন। কারণ তারা জালেম।
وَلِلّٰهِ مَا فِىۡ السَّمٰوٰتِ وَمَا فِىۡ الۡاَرۡضِؕ يَغۡفِرُ لِمَنۡ يَّشَآءُؕ وَيُعَذِّبُ مَنۡ يَّشَآءُؕ وَاللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِيۡمٌ
১২৯.) পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সমস্তই আল্লাহর মালিকানাধীন। যাকে চান মাফ করে দেন এবং যাকে চান শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡكُلُوۡا الرِّبٰٓوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَةً وَاتَّقُوۡا اللّٰهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَۚ
১৩০.) হে ঈমানদারগণ! এ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।
وَاتَّقُوۡا النَّارَ الَّتِىۡۤ اُعِدَّتۡ لِلۡكٰفِرِيۡنَۚ
১৩১.) সেই আগুন থেকে দূরে থাকো, যা কাফেরদের জন্য তৈরী করা হয়েছে
وَاَطِيۡعُوۡا اللّٰهَ وَالرَّسُوۡلَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُوۡنَۚ
১৩২.) এবং আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে নাও, আশা করা যায় তোমাদের ওপর রহম করা হবে।
وَسَارِعُوۡۤا اِلٰى مَغۡفِرَةٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَالۡاَرۡضُۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِيۡنَۙ
১৩৩.) দৌঁড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী করা হয়েছে,
الَّذِيۡنَ يُنۡفِقُوۡنَ فِىۡ السَّرَّآءِ وَالضَّرَّآءِ وَالۡكٰظِمِيۡنَ الۡغَيۡظَ وَالۡعَافِيۡنَ عَنِ النَّاسِؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡنَۚ
১৩৪.) যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।
وَالَّذِيۡنَ اِذَا فَعَلُوۡا فَاحِشَةً اَوۡ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ ذَكَرُوا اللّٰهَ فَاسۡتَغۡفَرُوۡا لِذُنُوۡبِهِمۡ وَمَنۡ يَّغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ اِلَّا اللّٰهُ وَلَمۡ يُصِرُّوۡا عَلٰى مَا فَعَلُوۡا وَهُمۡ يَعۡلَمُوۡنَ
১৩৫.) আর যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোন গোনাহের কাজ করে নিজেদের ওপর জুলুম করে বসলে আবার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে তাঁর কাছে নিজেদের গোনাহ খাতার জন্য মাফ চায় – কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে গোনাহ মাফ করতে পারেন – এবং জেনে বুঝে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জোর দেয় না,
اُولٰٓٮِٕكَ جَزَآؤُهُمۡ مَّغۡفِرَةٌ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ وَجَنّٰتٌ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَاؕ وَنِعۡمَ اَجۡرُ الۡعٰمِلِيۡنَ
১৩৬.) এ ধরনের লোকদের যে প্রতিদান তাদের রবের কাছে আছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি তাদের মাফ করে দেবেন এবং এমন বাগীচায় তাদের প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সৎকাজ যারা করে তাদের জন্য কেমন চমৎকার প্রতিদান!
قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ سُنَنٌۙ فَسِيۡرُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ فَانظُرُوۡا كَيۡفَ كَانَ عَاقِبَةُ الۡمُكَذِّبِيۡنَ
১৩৭.) তোমাদের আগে অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা (আল্লাহর বিধান ও হিদায়াতকে) মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে।
هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوۡعِظَةٌ لِّلۡمُتَّقِيۡنَ
১৩৮.) এটি মানব জাতির জন্য একটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশ।
وَلَا تَهِنُوۡا وَلَا تَحۡزَنُوۡا وَاَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ
১৩৯.) মনমরা হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
اِنۡ يَّمۡسَسۡكُمۡ قَرۡحٌ فَقَدۡ مَسَّ الۡقَوۡمَ قَرۡحٌ مِّثۡلُهٗؕ وَتِلۡكَ الۡاَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيۡنَ النَّاسِ وَلِيَعۡلَمَ اللّٰهُ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَيَتَّخِذَ مِنۡكُمۡ شُهَدَآءَؕ وَاللّٰهُ لَا يُحِبُّ الظّٰلِمِيۡنَۙ
১৪০.) এখন যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে এমনি ধরনের আঘাত লেগেছে তোমাদের বিরোধী পক্ষের গায়েও। এ–তো কালের উত্থান-পতন, মানুষের মধ্যে আমি এর আবর্তন করে থাকি। এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তাদেরকে বাছাই করে নিতে চান, যারা যথার্থ (সত্য ও ন্যায়ের) সাক্ষী হবে -কেননা জালেমদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না
وَلِيُمَحِّصَ اللّٰهُ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا وَيَمۡحَقَ الۡكٰفِرِيۡنَ
১৪১.) – এবং তিনি এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাচ্চা মুমিনদের বাছাই করে নিয়ে কাফেরদের চিহ্নিত করতে চাইছিলেন।
اَمۡ حَسِبۡتُمۡ اَنۡ تَدۡخُلُوۡا الۡجَنَّةَ وَلَمَّا يَعۡلَمِ اللّٰهُ الَّذِيۡنَ جٰهَدُوۡا مِنۡكُمۡ وَيَعۡلَمَ الصّٰبِرِيۡنَ
১৪২.) তোমরা কি মনে করে রেখেছো তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর পথে প্রাণপণ যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং কে তাঁর জন্য সবরকারী।
وَلَقَدۡ كُنۡتُمۡ تَمَنَّوۡنَ الۡمَوۡتَ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَلۡقَوۡهُ فَقَدۡ رَاَيۡتُمُوۡهُ وَاَنۡتُمۡ تَنۡظُرُوۡنَ
১৪৩.) তোমরা তো মৃত্যুর আকাংখা করছিলে! কিন্তু এটা ছিল তখনকার কথা যখন মৃত্যু সামনে আসেনি। তবে এখন তা তোমাদের সামনে এসে গেছে এবং তোমরা স্বচক্ষে তা দেখছো।
وَمَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِهِ الرُّسُلُؕ اَفَاِين مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انقَلَبۡتُمۡ عَلٰٓى اَعۡقَابِكُمۡؕ وَمَنۡ يَّنۡقَلِبۡ عَلٰى عَقِبَيۡهِ فَلَنۡ يَّضُرَّ اللّٰهَ شَيۡـًٔاؕ وَسَيَجۡزِىۡ اللّٰهُ الشّٰكِرِيۡنَ
১৪৪.) মুহাম্মাদ একজন রসূল বৈ তো আর কিছুই নয়। তার আগে আরো অনেক রসূলও চলে গেছে। যদি সে মারা যায় বা নিহত হয়, তাহলে তোমরা কি পেছনের দিকে ফিরে যাবে? মনে রেখো, যে পেছনের দিকে ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করবে না, তবে যারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকবে তাদেরকে তিনি পুরস্কৃত করবেন।
وَمَا كَانَ لِنَفۡسٍ اَنۡ تَمُوۡتَ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰهِ كِتٰبًا مُّؤَجَّلاًؕ وَمَنۡ يُّرِدۡ ثَوَابَ الدُّنۡيَا نُؤۡتِهٖ مِنۡهَاۚ وَمَنۡ يُّرِدۡ ثَوَابَ الۡاٰخِرَةِ نُؤۡتِهٖ مِنۡهَاؕ وَسَنَجۡزِىۡ الشّٰكِرِيۡنَ
১৪৫.) কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে। যে ব্যক্তি দুনিয়াবী পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে আমি তাকে দুনিয়া থেকেই দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালীন পুরস্কার লাভের আশায় কাজ করবে সে পরকালের পুরস্কার পাবে এবং শোকরকারীদেরকে আমি অবশ্যি প্রতিদান দেবো।
وَكَاَيِّنۡ مِّنۡ نَّبِىٍّ قٰتَلَۙ مَعَهٗ رِبِّيُّوۡنَ كَثِيۡرٌ فَمَا وَهَنُوۡا لِمَاۤ اَصَابَهُمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَمَا ضَعُفُوۡا وَمَا اسۡتَكَانُوۡاؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الصّٰبِرِيۡنَ
১৪৬.) এর আগে এমন অনেক নবী চলে গেছে যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহ ওয়ালা লড়াই করেছে। আল্লাহর পথে তাদের ওপর যেসব বিপদ এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয়নি। এ ধরনের সবরকারীদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন।
وَمَا كَانَ قَوۡلَهُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡا رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَاِسۡرَافَنَا فِىۡۤ اَمۡرِنَا وَثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَانصُرۡنَا عَلَى الۡقَوۡمِ الۡكٰفِرِيۡنَ
১৪৭.) তাদের দোয়া কেবল এতটুকুই ছিলঃ “হে আমাদের রব! আমাদের ভুল –ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দাও। আমাদের কাজের ব্যাপারে যেখানে তোমার সীমালংঘিত হয়েছে, তা তুমি মাফ করে দাও। আমাদের পা মজবুত করে দাও এবং কাফেরদের মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করো।”
فَاٰتٰٮهُمُ اللّٰهُ ثَوَابَ الدُّنۡيَا وَحُسۡنَ ثَوَابِ الۡاٰخِرَةِؕ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الۡمُحۡسِنِيۡنَ
১৪৮.) শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার পুরস্কারও দিয়েছেন এবং তার চেয়ে ভালো আখেরাতের পুরস্কারও দান করেছেন। এ ধরনের সৎকর্মশীলদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تُطِيۡعُوۡا الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا يَرُدُّوۡكُمۡ عَلٰٓى اَعۡقَابِكُمۡ فَتَنۡقَلِبُوۡا خٰسِرِيۡنَ
১৪৯.) হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা তাদের ইশারায় চলো, যারা কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে, তাহলে তারা তোমাদের উল্টো দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
بَلِ اللّٰهُ مَوۡلٰٮكُمۡۚ وَهُوَ خَيۡرُ النّٰصِرِيۡنَ
১৫০.) (তাদের কথা ভুল) প্রকৃত সত্য এই যে, আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী এবং তিনি সবচেয়ে ভালো সাহায্যকারী।
سَنُلۡقِىۡ فِىۡ قُلُوۡبِ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا الرُّعۡبَ بِمَاۤ اَشۡرَكُوۡا بِاللّٰهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهٖ سُلۡطٰنًاؕ وَّمَاۡوٰٮهُمُ النَّارُؕ وَبِئۡسَ مَثۡوَى الظّٰلِمِيۡنَ
১৫১.) শীঘ্রই সেই সময় এসে যাবে যখন আমি সত্য অস্বীকারকারীদের মনের মধ্যে বিভীষিকা সৃষ্টি করে দেবো। কারণ তারা আল্লাহর সাথে তাঁর খোদায়ী কর্তৃত্বে অংশীদার করে, যার স্বপক্ষে আল্লাহ কোন প্রমাণপত্র অবতীর্ণ করেননি। তাদের শেষ আবাস জাহান্নাম এবং ঐ জালেমদের ভাগ্যে জুটবে অত্যন্ত খারাপ আবাসস্থল।
وَلَقَدۡ صَدَقَكُمُ اللّٰهُ وَعۡدَهٗۤ اِذۡ تَحُسُّوۡنَهُمۡ بِاِذۡنِهٖۚ حَتّٰىۤ اِذَا فَشِلۡتُمۡ وَتَنٰزَعۡتُمۡ فِىۡ الۡاَمۡرِ وَعَصَيۡتُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَرٰٮكُمۡ مَّا تُحِبُّوۡنَؕ مِنۡكُمۡ مَّنۡ يُّرِيۡدُ الدُّنۡيَا وَمِنۡكُمۡ مَّنۡ يُّرِيۡدُ الۡاٰخِرَةَۚ ثُمَّ صَرَفَكُمۡ عَنۡهُمۡ لِيَبۡتَلِيَكُمۡۚ وَلَقَدۡ عَفَا عَنۡكُمۡؕ وَاللّٰهُ ذُوۡ فَضۡلٍ عَلَى الۡمُؤۡمِنِيۡنَ
১৫২.) আল্লাহ তোমাদের কাছে (সাহায্য ও সমর্থনদানের) যে ওয়াদা করেছিলেন, তা পূর্ণ করেছেন। শুরুতে তাঁর হুকুমে তোমরাই তাদেরকে হত্যা করেছিলে। কিন্তু যখন তোমরা দুর্বলতা দেখালে এবং নিজেদের কাজে পারস্পরিক মতবিরোধে লিপ্ত হলে আর যখনই আল্লাহ তোমাদের সেই জিনিস দেখালেন যার ভালোবাসায় তোমরা বাঁধা ছিলে (অর্থাৎ গনীমতের মাল) , তোমরা নিজেদের নেতার হুকুম অমান্য করে বসলে, কারণ তোমাদের কিছু লোক ছিল দুনিয়ার প্রত্যাশী আর কিছু লোকের কাম্য ছিল আখেরাত, তখনই আল্লাহ কাফরদের মোকাবিলায় তোমাদেরকে পিছিয়ে দিলেন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তবে যথার্থই আল্লাহ এরপরও তোমাদের মাফ করে দিয়েছেন। কারণ মুমিনদের প্রতি আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহের দৃষ্টি রাখেন।
اِذۡ تُصۡعِدُوۡنَ وَلَا تَلۡوٗنَ عَلٰٓى اَحَدٍ وَّالرَّسُوۡلُ يَدۡعُوۡكُمۡ فِىۡۤ اُخۡرٰٮكُمۡ فَاَثَابَكُمۡ غَمَّۢا بِغَمٍّ لِّكَيۡلَا تَحۡزَنُوۡا عَلٰى مَا فَاتَكُمۡ وَلَا مَاۤ اَصٰبَكُمۡؕ وَاللّٰهُ خَبِيۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ
১৫৩.) স্মরণ করো, যখন তোমরা পালাবার কাজে এমনই ব্যস্ত ছিলে যে, কারোর দিকে ফিরে তাকাবার হুঁশও কারো ছিল না এবং রসূল তোমাদের পেছনে তোমাদের ডাকছিল। সে সময় তোমাদের এহেন আচরণের প্রতিফল স্বরূপ আল্লাহ তোমাদের দিলেন দুঃখের পর দুঃখ। এভাবে তোমরা ভবিষ্যতে এই শিক্ষা পাবে যে, যা কিছু তোমাদের হাত থেকে বের হয়ে যায় অথবা যে বিপদই তোমাদের ওপর নাযিল হয়, সে ব্যাপারে দুঃখিত হবে না। আল্লাহ তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে জানেন।
ثُمَّ اَنۡزَلَ عَلَيۡكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ الۡغَمِّ اَمَنَةً نُّعَاسًا يَّغۡشٰى طَآٮِٕفَةً مِّنۡكُمۡۙ وَطَآٮِٕفَةٌ قَدۡ اَهَمَّتۡهُمۡ اَنۡفُسُهُمۡ يَظُنُّوۡنَ بِاللّٰهِ غَيۡرَ الۡحَقِّ ظَنَّ الۡجَاهِلِيَّةِؕ يَقُوۡلُوۡنَ هَل لَّنَا مِنَ الۡاَمۡرِ مِنۡ شَىۡءٍؕ قُلۡ اِنَّ الۡاَمۡرَ كُلَّهٗ لِلّٰهِؕ يُخۡفُوۡنَ فِىۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ مَّا لَا يُبۡدُوۡنَ لَكَؕ يَقُوۡلُوۡنَ لَوۡ كَانَ لَنَا مِنَ الۡاَمۡرِ شَىۡءٌ مَّا قُتِلۡنَا هٰهُنَاؕ قُل لَّوۡ كُنۡتُمۡ فِىۡ بُيُوۡتِكُمۡ لَبَرَزَ الَّذِيۡنَ كُتِبَ عَلَيۡهِمُ الۡقَتۡلُ اِلٰى مَضَاجِعِهِمۡۚ وَلِيَبۡتَلِىَ اللّٰهُ مَا فِىۡ صُدُوۡرِكُمۡ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِىۡ قُلُوۡبِكُمۡؕ وَاللّٰهُ عَلِيۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ
১৫৪.) এ দুঃখের পর আল্লাহ তোমাদের কিছু লোককে আবার এমন প্রশান্তি দান করলেন যে, তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। কিন্তু আর একটি দল, নিজের স্বার্থই ছিল যার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ, আল্লাহ সম্পর্কে নানান ধরনের জাহেলী ধারণা পোষণ করতে থাকলো, যা ছিল একেবারেই সত্য বিরোধী। তারা এখন বলেছে, “এই কাজ পরিচালনার ব্যাপারে আমাদেরও কি কোন অংশ আছে?” তাদেরকে বলে দাও, “(কারো কোন অংশ নেই, ) এ কাজেই সমস্ত ইখতিয়ার রয়েছে এক মাত্র আল্লাহর হাতে।” আসলে এরা নিজেদের মনের মধ্যে যে কথা লুকিয়ে রেখেছে তা তোমাদের সামনে প্রকাশ করে না। এদের আসল বক্তব্য হচ্ছে, “যদি (নেতৃত্ব) ক্ষমতায় আমাদের কোন অংশ থাকতো, তাহলে আমরা মারা পড়তাম না।” ওদেরকে বলে দাও, “যদি তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করতে তাহলেও যাদের মৃত্যু লেখা হয়ে গিয়েছিল, তারা নিজেরাই নিজেদের বধ্যভূমির দিকে এগিয়ে আসতো।” আর এই যে বিষয়টি সংঘটিত হলো, এটি এ জন্য ছিল যে, তোমাদের বুকের মধ্যে যা কিছু গোপন রয়েছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করে নেবেন এবং তোমাদের মনের মধ্যে যে গলদ রয়েছে তা দূর করে দেবেন। আল্লাহ মনের অবস্থা খুব ভালো করেই জানেন।
اِنَّ الَّذِيۡنَ تَوَلَّوۡا مِنۡكُمۡ يَوۡمَ الۡتَقَى الۡجَمۡعٰنِۙ اِنَّمَا اسۡتَزَلَّهُمُ الشَّيۡطٰنُ بِبَعۡضِ مَا كَسَبُوۡاۚ وَلَقَدۡ عَفَا اللّٰهُ عَنۡهُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ حَلِيۡمٌ
১৫৫.) তোমাদের মধ্য থেকে যারা মোকাবিলার দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল তাদের এ পদস্খলনের কারণ এই ছিল যে, তাদের কোন কোন দুর্বলতার কারণ শয়তান তাদের পা টলিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও সহনশীল।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا وَقَالُوۡا لِاِخۡوَانِهِمۡ اِذَا ضَرَبُوۡا فِىۡ الۡاَرۡضِ اَوۡ كَانُوۡا غُزًّى لَّوۡ كَانُوۡا عِنۡدَنَا مَا مَاتُوۡا وَمَا قُتِلُوۡۚا لِيَجۡعَلَ اللّٰهُ ذٰلِكَ حَسۡرَةً فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡؕ وَاللّٰهُ يُحۡىٖ وَيُمِيۡتُؕ وَاللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِيۡرٌ
১৫৬.) হে ঈমানদারগণ! কাফেরদের মতো কথা বলো না। তাদের আত্মীয়স্বজনরা কখনো সফরে গেলে অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে (এবং সেখানে কোন দুর্ঘটনায় পতিত হলে) তারা বলে, যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো তাহলে মারা যেতোনা এবং নিহত হতো না। এ ধরনের কথাকে আল্লাহ তাদের মানসিক খেদ ও আক্ষেপের কারণে পরিণত করেন। নয়তো জীবন–মৃত্যু তো একমাত্র আল্লাহই দান করে থাকেন এবং তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপের ওপর তিনি দৃষ্টি রাখেন।
وَلَٮِٕنۡ قُتِلۡتُمۡ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ اَوۡ مُتُّمۡ لَمَغۡفِرَةٌ مِّنَ اللّٰهِ وَرَحۡمَةٌ خَيۡرٌ مِّمَّا يَجۡمَعُوۡنَ
১৫৭.) যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও বা মারা যাও তা হলে তোমরা আল্লাহর যে রহমত ও ক্ষমা লাভ করবে, তা এরা যা কিছু জমা করে তার চাইতে ভালো।
وَلَٮِٕنۡ مُّتُّمۡ اَوۡ قُتِلۡتُمۡ لَاِلَى اللّٰهِ تُحۡشَرُوۡنَ
১৫৮.) আর তোমরা মারা যাও বা নিহত হও, সব অবস্থায় তোমাদের অবশ্যি আল্লাহর দিকেই যেতে হবে।
فَبِمَا رَحۡمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنۡتَ لَهُمۡۚ وَلَوۡ كُنۡتَ فَظًّا غَلِيۡظَ الۡقَلۡبِ لَانفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِكَ فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَاسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَشَاوِرۡهُمۡ فِىۡ الۡاَمۡرِۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى اللّٰهِؕ اِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الۡمُتَوَكِّلِيۡنَ
১৫৯.) (হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ত্রুটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করো। তারপর যখন কোন মতের ভিত্তিতে তোমার স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।
اِنۡ يَّنۡصُرۡكُمُ اللّٰهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمۡۚ وَاِنۡ يَّخۡذُلۡكُمۡ فَمَنۡ ذَا الَّذِىۡ يَنۡصُرُكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِهٖؕ وَعَلَى اللّٰهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
১৬০.) আল্লাহ যদি তোমাদের সাহায্য করেন তাহলে কোন শক্তি তোমাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করেন, তাহলে এরপর কে আছে তোমাদের সাহায্য করার মতো? কাজেই সাচ্চা মুমিনদের আল্লাহর ওপরই ভরসা করা উচিত।
وَمَا كَانَ لِنَبِىٍّ اَنۡ يَّغُلَّؕ وَمَنۡ يَّغۡلُلۡ يَاۡتِ بِمَا غَلَّ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِۚ ثُمَّ تُوَفّٰى كُلُّ نَفۡسٍ مَّا كَسَبَتۡ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُوۡنَ
১৬১.) খেয়ানত করা কোন নবীর কাজ হতে পারে না। যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে কিয়ামতের দিন সে নিজের খেয়ানত করা জিনিস সহকারে হাজির হয়ে যাবে। তারপর প্রত্যেকেই তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান পেয়ে যাবে এবং কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
اَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضۡوَانَ اللّٰهِ كَمَنۡۢ بَآءَ بِسَخَطٍ مِّنَ اللّٰهِ وَمَاۡوٰٮهُ جَهَنَّمُؕ وَبِئۡسَ الۡمَصِيۡرُ
১৬২.) যে ব্যক্তি সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলে সে কেমন করে এমন ব্যক্তির মতো কাজ করতে পারে, যাকে আল্লাহর গযব ঘিরে ফেলেছে এবং যার শেষ আবাস জাহান্নাম, যা সবচেয়ে খারাপ আবাস?
هُمۡ دَرَجٰتٌ عِنۡدَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ بَصِيۡرٌۢ بِمَا يَعۡمَلُوۡنَ
১৬৩.) আল্লাহর কাছে এ উভয় ধরনের লোকদের মধ্যে বহু পর্যায়ের পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ সবার কার্যকলাপের ওপর নজর রাখেন।
لَقَدۡ مَنَّ اللّٰهُ عَلَى الۡمُؤۡمِنِيۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِيۡهِمۡ رَسُوۡلاً مِّنۡ اَنۡفُسِهِمۡ يَتۡلُوۡا عَلَيۡهِمۡ اٰيٰتِهٖ وَيُزَكِّيۡهِمۡ وَيُعَلِّمُهُمُ الۡكِتٰبَ وَالۡحِكۡمَةَۚ وَاِنۡ كَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِىۡ ضَلٰلٍ مُّبِيۡنٍ
১৬৪.) আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।
ؕاَوَلَمَّاۤ اَصٰبَتۡكُمۡ مُّصِيۡبَةٌ قَدۡ اَصَبۡتُمۡ مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ اَنّٰى هٰذَاؕ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِنۡدِ اَنۡفُسِكُمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
১৬৫.) তোমাদের ওপর যখন বিপদ এসে পড়লো তোমরা বলতে লাগলে, এ আবার কোথায় থেকে এলো? তোমাদের এ অবস্থা কেন? অথচ (বদরের যুদ্ধে) এর দ্বিগুণ বিপদ তোমাদের মাধ্যমে তোমাদের বিরোধী পক্ষের ওপর পড়েছিল। হে নবী! ওদের বলে দাও, তোমরা নিজেরাই এ বিপদ এনেছো। আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের ওপর শক্তিমান।
وَمَاۤ اَصَابَكُمۡ يَوۡمَ الۡتَقَى الۡجَمۡعٰنِ فَبِاِذۡنِ اللّٰهِ وَلِيَعۡلَمَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَۙ
১৬৬.) যুদ্ধের দিন তোমাদের যে ক্ষতি হয় তা ছিল আল্লাহর হুকুমে এবং তা এ জন্য ছিল যাতে আল্লাহ দেখে নেন তোমাদের মধ্যে কে মুমিন
وَلِيَعۡلَمَ الَّذِيۡنَ نَافَقُوۡاۖۚ وَقِيۡلَ لَهُمۡ تَعَالَوۡا قَاتِلُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ اَوِ ادۡفَعُوۡاۚ قَالُوۡا لَوۡ نَعۡلَمُ قِتَالاً لَّاتَّبَعۡنٰكُمۡؕ هُمۡ لِلۡكُفۡرِ يَوۡمَٮِٕذٍ اَقۡرَبُ مِنۡهُمۡ لِلۡاِيۡمَانِۚ يَقُوۡلُوۡنَ بِاَفۡوٰهِهِمۡ مَّا لَيۡسَ فِىۡ قُلُوۡبِهِمۡؕ وَاللّٰهُ اَعۡلَمُ بِمَا يَكۡتُمُوۡنَ
১৬৭.) এবং কে মুনাফিক। এ মুনাফিকদের যখন বলা হলো, এসো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো অথবা (কমপক্ষে) নিজের শহরের প্রতিরক্ষা করো, তারা বলতে লাগলোঃ যদি আমরা জানতাম আজ যুদ্ধ হবে, তাহলে আমরা অবশ্যি তোমাদের সাথে চলতাম। যখন তারা একথা বলছিল তখন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর অনেক বেশী কাছে অবস্থান করছিল। তারা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে, যা তাদের মনের মধ্যে নেই এবং যা কিছু তারা মনের মধ্যে গোপন করে আল্লাহ তা খুব ভালো করেই জানেন।
الَّذِيۡنَ قَالُوۡا لِاِخۡوَانِهِمۡ وَقَعَدُوۡا لَوۡ اَطَاعُوۡنَا مَا قُتِلُوۡاؕ قُلۡ فَادۡرَءُوۡا عَنۡ اَنۡفُسِكُمُ الۡمَوۡتَ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ
১৬৮.) এরা নিজেরা বসে থাকলো এবং এদের ভাই –বন্ধু যারা লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে বলেছিলঃ যদি তারা আমাদের কথা মেনে নিতো, তাহলে মারা যেতো না। ওদের বলে দাও, তোমরা নিজেদের একথায় যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের নিজেদের মৃত্যু যখন আসবে তখন তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে দেখাও।
وَلَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِيۡنَ قُتِلُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ اَمۡوَاتًاؕ بَلۡ اَحۡيَآءٌ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُوۡنَۙ
১৬৯.) যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না। তারা আসলে জীবিত। নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ করছে।
فَرِحِيۡنَ بِمَاۤ اٰتٰٮهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖۙ وَيَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِالَّذِيۡنَ لَمۡ يَلۡحَقُوۡا بِهِمۡ مِّنۡ خَلۡفِهِمۡۙ اَلَّا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُوۡنَۘ
১৭০.) আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তাতেই তারা আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত এবং যেসব ঈমানদার লোক তাদের পরে এ দুনিয়ায় রয়ে গেছে এবং এখনো সেখানে পৌঁছেনি, তাদের জন্যও কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই, একথা জেনে তারা নিশ্চিন্ত হতে পেরেছে।
يَسۡتَبۡشِرُوۡنَ بِنِعۡمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ وَفَضۡلٍۙ وَّاَنَّ اللّٰهَ لَا يُضِيۡعُ اَجۡرَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَۛۚ
১৭১.) তারা আল্লাহর পুরস্কার ও অনুগ্রহ লাভে আনন্দিত ও উল্লসিত এবং তারা জানতে পেরেছে যে, আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।
الَّذِيۡنَ اسۡتَجَابُوۡا لِلّٰهِ وَالرَّسُوۡلِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَصَابَهُمُ الۡقَرۡحُؕۛ لِلَّذِيۡنَ اَحۡسَنُوۡا مِنۡهُمۡ وَاتَّقَوۡا اَجۡرٌ عَظِيۡمٌۚ
১৭২.) আহত হবার পরও যারা আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ-নেককার ও মুত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান। আর যাদেরকে
الَّذِيۡنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدۡ جَمَعُوۡا لَكُمۡ فَاخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ اِيۡمٰنًاۖ وَّقَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰهُ وَنِعۡمَ الۡوَكِيۡلُ
১৭৩.) লোকেরা বললোঃ তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে। তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছেঃ আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী।
فَانقَلَبُوۡا بِنِعۡمَةٍ مِّنَ اللّٰهِ وَفَضۡلٍ لَّمۡ يَمۡسَسۡهُمۡ سُوۡٓءٌۙ وَّاتَّبَعُوۡا رِضۡوَانَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ ذُوۡ فَضۡلٍ عَظِيۡمٍ
১৭৪.) অবশেষে তারা ফিরে এলো আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ সহকারে। তাদের কোন রকম ক্ষতি হয়নি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর চলার সৌভাগ্যও তারা লাভ করলো। আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহকারী।
اِنَّمَا ذٰلِكُمُ الشَّيۡطٰنُ يُخَوِّفُ اَوۡلِيَآءَهٗ فَلَا تَخَافُوۡهُمۡ وَخَافُوۡنِ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِيۡنَ
১৭৫.) এখন তোমরা জেনে ফেলেছো, সে আসলে শয়তান ছিল, তার বন্ধুদের অনর্থক ভয় দেখাচ্ছিলো। কাজেই আগামীতে তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা যথার্থ ঈমানদার হয়ে থাকো।
وَلَا يَحۡزُنۡكَ الَّذِيۡنَ يُسَارِعُوۡنَ فِىۡ الۡكُفۡرِۚ اِنَّهُمۡ لَنۡ يَّضُرُّوۡا اللّٰهَ شَيۡـًٔاؕ يُرِيۡدُ اللّٰهُ اَلَّا يَجۡعَلَ لَهُمۡ حَظًّا فِىۡ الۡاٰخِرَةِۚ وَلَهُمۡ عَذَابٌ عَظِيۡمٌ
১৭৬.) (হে নবী!) যারা আজ কুফরীর পথে খুব বেশী দৌড়াদৌড়ি করছে তাদের তৎপরতা যেন তোমাকে মলিন বদন না করে। এরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ আখেরাতে এদের কোন অংশ দিতে চান না। আর সবশেষে তারা কঠোর শাস্তি পাবে।
اِنَّ الَّذِيۡنَ اشۡتَرَوُا الۡكُفۡرَ بِالۡاِيۡمَانِ لَنۡ يَّضُرُّوۡا اللّٰهَ شَيۡـًٔاۚ وَّلَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
১৭৭.) যারা ঈমানকে ছেড়ে দিয়ে কুফরী কিনে নিয়েছে তারা নিঃসন্দেহে আল্লাহর কোন ক্ষতি করছে না। তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে।
وَلَا يَحۡسَبَنَّ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡۤا اَنَّمَا نُمۡلِىۡ لَهُمۡ خَيۡرٌ لِّاَنۡفُسِهِمۡؕ اِنَّمَا نُمۡلِىۡ لَهُمۡ لِيَزۡدَادُوۡۤا اِثۡمًاۚ وَلَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِيۡنٌ
১৭৮.) কাফেরদের আমি যে ঢিল দিয়ে চলছি এটাকে যেন তারা নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। আমি তাদেরকে এ জন্য ঢিল দিচ্ছি, যাতে তারা গোনাহের বোঝা ভারী করে নেয়, তারপর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অপমানকর শাস্তি।
مَّا كَانَ اللّٰهُ لِيَذَرَ الۡمُؤۡمِنِيۡنَ عَلٰى مَاۤ اَنۡتُمۡ عَلَيۡهِ حَتّٰى يَمِيۡزَ الۡخَبِيۡثَ مِنَ الطَّيِّبِؕ وَمَا كَانَ اللّٰهُ لِيُطۡلِعَكُمۡ عَلَى الۡغَيۡبِ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ يَجۡتَبِىۡ مِنۡ رُّسُلِهٖ مَنۡ يَّشَآءُ فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَرُسُلِهٖۚ وَاِنۡ تُؤۡمِنُوۡا وَتَتَّقُوۡا فَلَكُمۡ اَجۡرٌ عَظِيۡمٌ
১৭৯.) তোমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না। পাক–পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন। কিন্তু তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়। গায়েবের খবর জানাবার জন্য তিনি নিজের রসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন। কাজেই (গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান রাখো। যদি তোমরা ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে।
وَلَا يَحۡسَبَنَّ الَّذِيۡنَ يَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰٮهُمُ اللّٰهُ مِنۡ فَضۡلِهٖ هُوَ خَيۡرًا لَّهُمۡؕ بَلۡ هُوَ شَرٌّ لَّهُمۡؕ سَيُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِهٖ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ وَلِلّٰهِ مِيۡرٰثُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِؕ وَاللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِيۡرٌ
১৮০.) আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে। না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ। কৃপণতা করে তারা যা কিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে। পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই। আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন।
لَّقَدۡ سَمِعَ اللّٰهُ قَوۡلَ الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ فَقِيۡرٌ وَّنَحۡنُ اَغۡنِيَآءُۘ سَنَكۡتُبُ مَا قَالُوۡا وَقَتۡلَهُمُ الۡاَنۡۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقٍّۙۚ وَّنَقُوۡلُ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِيۡقِ
১৮১.) আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন যারা বলে, আল্লাহ গরীব এবং আমরা ধনী। এদের কথাও আমি লিখে নেবো এবং এর আগে যে পয়গাম্বরদেরকে এরা অন্যায়ভাবে হত্যা করে এসেছে তাও এদের আমলনামায় বসিয়ে দেয়া হয়েছে। (যখন ফায়সালার সময় আসবে তখন) আমি তাদেরকে বলবোঃ এই নাও, এবার জাহান্নামের আযাবের মজা চাখো!
ذٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتۡ اَيۡدِيۡكُمۡ وَاَنَّ اللّٰهَ لَيۡسَ بِظَلَّامٍ لِّلۡعَبِيۡدِۚ
১৮২.) এটা তোমাদের হাতের উপার্জন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য জালেম নন।
الَّذِيۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰهَ عَهِدَ اِلَيۡنَاۤ اَلَّا نُؤۡمِنَ لِرَسُوۡلٍ حَتّٰى يَاۡتِيَنَا بِقُرۡبَانٍ تَاۡكُلُهُ النَّارُؕ قُلۡ قَدۡ جَآءَكُمۡ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِىۡ بِالۡبَيِّنٰتِ وَبِالَّذِىۡ قُلۡتُمۡ فَلِمَ قَتَلۡتُمُوۡهُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ صٰدِقِيۡنَ
১৮৩.) যারা বলেঃ “আল্লাহ্ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা কাউকে রসূল বলে স্বীকার করবো না যতক্ষণ না তিনি আমাদের সামনে এমন কুরবানী করবেন যাকে আগুন (অদৃশ্য থেকে এসে) খেয়ে ফেলবে।” তাদেরকে বলোঃ আমার আগে তোমাদের কাছে অনেক রসূল এসেছেন, তারা অনেক উজ্জ্বল নিদর্শন এনেছিলেন এবং তোমরা যে নিদর্শনটির কথা বলছো সেটিও তারা এনেছিলেন। এক্ষেত্রে (ঈমান আনার জন্য এ শর্ত পেশ করার ব্যাপারে) যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে ঐ রসূলদেরকে তোমরা হত্যা করেছিলে কেন?
فَاِنۡ كَذَّبُوۡكَ فَقَدۡ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّنۡ قَبۡلِكَ جَآءُوۡ بِالۡبَيِّنٰتِ وَالزُّبُرِ وَالۡكِتٰبِ الۡمُنِيۡرِ
১৮৪.) এখন, হে মুহাম্মাদ! যদি এরা তোমাকে মিথ্যা বলে থাকে, তাহলে তোমার পূর্বে বহু রসূলকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তারা স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, সহীফা ও আলোদানকারী কিতাব এনেছিলে।
كُلُّ نَفۡسٍ ذَآٮِٕقَةُ الۡمَوۡتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَكُمۡ يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدۡخِلَ الۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَؕ وَمَا الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
১৮৫.) অবশেষে প্রত্যেক ব্যক্তিকে মরতে হবে এবং তোমরা সবাই কিয়ামতের দিন নিজেদের পূর্ণ প্রতিদান লাভ করবে। একমাত্র সেই ব্যক্তিই সফলকাম হবে, যে সেখানে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে এবং যাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর এ দুনিয়াটা তো নিছক একটা বাহ্যিক প্রতারণার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।
لَتُبۡلَوُنَّ فِىۡۤ اَمۡوَالِكُمۡ وَاَنۡفُسِكُمۡ وَلَتَسۡمَعُنَّ مِنَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِكُمۡ وَمِنَ الَّذِيۡنَ اَشۡرَكُوۡۤا اَذًى كَثِيۡرًاؕ وَاِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَتَتَّقُوۡا فَاِنَّ ذٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ
১৮৬.) (হে মুসলমানগণ!) তোমাদের অবশ্যি ধন ও প্রাণের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে এবং তোমরা আহলি কিতাব ও মুশরিকদের থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা শুনবে। যদি এমন অবস্থায় তোমরা সবর ও তাকওয়ার নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো তাহলে তা হবে বিরাট সাহসিকতার পরিচায়ক।
وَاِذۡ اَخَذَ اللّٰهُ مِيۡثَاقَ الَّذِيۡنَ اُوۡتُوۡا الۡكِتٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهٗ لِلنَّاسِ وَلَا تَكۡتُمُوۡنَهٗ فَنَبَذُوۡهُ وَرَآءَ ظُهُوۡرِهِمۡ وَاشۡتَرَوۡا بِهٖ ثَمَنًا قَلِيۡلاًؕ فَبِئۡسَ مَا يَشۡتَرُوۡنَ
১৮৭.) এ আহলি কিতাবদের সেই অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দাও, যা আল্লাহ তাদের থেকে নিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিলঃ তোমরা কিতাবের শিক্ষা মানুষের মধ্যে প্রচার করবে, তা গোপন করতে পারবে না। কিন্তু তারা কিতাবকে পিছনে ফেলে রেখেছে এবং সামান্য দামে তা বিক্রি করে দিয়েছে। কতই না নিকৃষ্ট কারবার তারা করে যাচ্ছে!
لَا تَحۡسَبَنَّ الَّذِيۡنَ يَفۡرَحُوۡنَ بِمَاۤ اَتَوا وَّيُحِبُّوۡنَ اَنۡ يُّحۡمَدُوۡا بِمَا لَمۡ يَفۡعَلُوۡا فَلَا تَحۡسَبَنَّهُمۡ بِمَفَازَةٍ مِّنَ الۡعَذَابِۚ وَلَهُمۡ عَذَابٌ اَلِيۡمٌ
১৮৮.) যারা নিজেদের কার্যকলাপে আনন্দিত এবং যে কাজ যথার্থই তারা নিজেরা করেনি সেজন্য প্রশংসা পেতে চায়, তাদেরকে তোমরা আযাব থেকে সংরক্ষিত মনে করো না। আসলে তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তৈরী রয়েছে।
وَلِلّٰهِ مُلۡكُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِؕ وَاللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَىۡءٍ قَدِيۡرٌ
১৮৯.) আল্লাহ পৃথিবী ও আকাশের মালিক এবং তাঁর শক্তি সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে।
اِنَّ فِىۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ وَاخۡتِلَافِ الَّيۡلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّاُولِىۡ الۡاَلۡبَابِ
১৯০.) পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে
الَّذِيۡنَ يَذۡكُرُوۡنَ اللّٰهَ قِيَامًا وَّقُعُوۡدًا وَّعَلٰى جُنُوۡبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُوۡنَ فِىۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِۚ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بٰطِلاً ۚسُبۡحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
১৯১.) যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা- ভাবনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন। (তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) “হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে সৃষ্টি করো নি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের রক্ষা করো।
رَبَّنَاۤ اِنَّكَ مَنۡ تُدۡخِلِ النَّارَ فَقَدۡ اَخۡزَيۡتَهٗؕ وَمَا لِلظّٰلِمِيۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ
১৯২.) তুমি যাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছো, তাকে আসলে বড়ই লাঞ্ছনা ও অপমানের মধ্যে ঠেলে দিয়েছো এবং এহেন জালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।
رَّبَّنَاۤ اِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِيًا يُّنَادِىۡ لِلۡاِيۡمَانِ اَنۡ اٰمِنُوۡا بِرَبِّكُمۡ فَاٰمَنَّاۖ رَبَّنَا فَاغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوۡبَنَا وَكَفِّرۡ عَنَّا سَيِّاٰتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الۡاَبۡرَارِۚ
১৯৩.) হে আমাদের মালিক! আমরা একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনেছিলাম। তিনি ঈমানের দিকে আহবান করছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা নিজেদের রবকে মেনে নাও। আমরা তার আহবান গ্রহণ করেছি। কাজেই, হে আমাদের প্রভু! আমরা যেসব গোনাহ করছি তা মাফ করে দাও। আমাদের মধ্যে যেসব অসৎবৃত্তি আছে সেগুলো আমাদের থেকে দূর করে দাও এবং নেক লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করো।
رَبَّنَا وَاٰتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلٰى رُسُلِكَ وَلَا تُخۡزِنَا يَوۡمَ الۡقِيٰمَةِؕ اِنَّكَ لَا تُخۡلِفُ الۡمِيۡعَادَ
১৯৪.) হে আমাদের রব! তোমার রসূলদের মাধ্যমে তুমি যেসব ওয়াদা করেছো আমাদের সাথে, সেগুলো পূর্ণ করো এবং কিয়ামতের দিন আমাদের লাঞ্ছনার গর্তে ফেলে দিয়ো না। নিঃসন্দেহে তুমি ওয়াদা খেলাপকারী নও।”
ۚفَاسۡتَجَابَ لَهُمۡ رَبُّهُمۡ اَنِّىۡ لَاۤ اُضِيۡعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنۡكُمۡ مِّنۡ ذَكَرٍ اَوۡ اُنۡثٰىۚ بَعۡضُكُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍۚ فَالَّذِيۡنَ هَاجَرُوۡا وَاُخۡرِجُوۡا مِنۡ دِيَارِهِمۡ وَاُوۡذُوۡا فِىۡ سَبِيۡلِىۡ وَقٰتَلُوۡا وَقُتِلُوۡا لَاُكَفِّرَنَّ عَنۡهُمۡ سَيِّاٰتِهِمۡ وَلَاُدۡخِلَنَّهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُۚ ثَوَابًا مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الثَّوَابِ
১৯৫.) জবাবে তাদের রব বললেনঃ “আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো না। পুরুষ হও বা নারী, তোমরা সবাই একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যারা আমার জন্য নিজেদের স্বদেশ ভূমি ত্যাগ করেছে এবং আমার পথে যাদেরকে নিজেদের ঘর বাড়ি থেকে বের করে দেয়া ও কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং যারা আমার জন্য লড়েছে ও মারা গেছে, তাদের সমস্ত গোনাহ আমি মাফ করে দেবো এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবো যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলবে। এসব হচ্ছে আল্লাহর কাছে তাদের প্রতিদান এবং সবচেয়ে ভালো প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে।”
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِيۡنَ كَفَرُوۡا فِىۡ الۡبِلَادِ
১৯৬.) হে নবী! দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে আল্লাহর নাফরমান লোকদের চলাফেরা যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে না দেয়।
مَتَاعٌ قَلِيۡلٌ ثُمَّ مَاۡوٰٮهُمۡ جَهَنَّمُؕ وَبِئۡسَ الۡمِهَادُ
১৯৭.) এটা নিছক কয়েক দিনের জীবনের সামান্য আনন্দ ফূর্তি মাত্র। তারপর এরা সবাই জাহান্নামে চলে যাবে, যা সবচেয়ে খারাপ স্থান।
لٰكِنِ الَّذِيۡنَ اتَّقَوۡا رَبَّهُمۡ لَهُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِىۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِيۡنَ فِيۡهَا نُزُلاً مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِؕ وَمَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَيۡرٌ لِّلۡاَبۡرَارِ
১৯৮.) বিপরীত পক্ষে যারা নিজেদের রবকে ভয় করে জীবন যাপন করে তাদের জন্য এমন সব বাগান রয়েছে, যার নীচে দিয়ে ঝরণাধারা বয়ে চলছে। সেখানে তারা চিরদিন থাকবে। এ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য মেহমানদারীর সরঞ্জাম। আর যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে, নেক লোকদের জন্য তাই ভালো।
وَاِنَّ مِنۡ اَهۡلِ الۡكِتٰبِ لَمَنۡ يُّؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَيۡكُمۡ وَمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَيۡهِمۡ خٰشِعِيۡنَ لِلّٰهِۙ لَا يَشۡتَرُوۡنَ بِاٰيٰتِ اللّٰهِ ثَمَنًا قَلِيۡلاًؕ اُولٰٓٮِٕكَ لَهُمۡ اَجۡرُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡؕ اِنَّ اللّٰهَ سَرِيۡعُ الۡحِسَابِ
১৯৯.) আহলি কিতাবদের মধ্যেও এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহকে মানে তোমাদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে তার ওপর ঈমান আনে এবং এর আগে তাদের নিজেদের কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছিল তার ওপরও ঈমান রাখে, যারা আল্লাহর সামনে বিনত মস্তক এবং আল্লাহর আয়াতকে সামান্য দামে বিক্রি করে না। তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে। আর তিনি হিসেব চুকিয়ে দেবার ব্যাপারে দেরী করেন না।
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا اصۡبِرُوۡا وَصَابِرُوۡا وَرَابِطُوۡا وَاتَّقُوۡا اللّٰهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
২০০.) হে ঈমানদারগণ! সবরের পথ অবলম্বন করো, বাতিলপন্থীদের মোকাবিলায় দৃঢ়তা দেখাও, হকের খেদমত করার জন্য উঠে পড়ে লাগো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হবে।
No comments:
Post a Comment